May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

লিটনের সেঞ্চুরিতে সকলেই আনন্দে মেতে উঠেন

ডেস্ক: প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়ার পর হেলমেট খুলে ঈশ্বরকে নিঃশব্দে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের ব্যাটার লিটন দাস। তবে টেলিভিশনে দেখা যায় লিটনের সেঞ্চুরিতে আনন্দে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম।
লিটনের সেঞ্চুরির পর টিভি ক্যামেরা ড্রেসিংরুমের দিকে দেখানো হয়। তাতে দেখা যায় ড্রেসিংরুমের সকলেই লিটনের সেঞ্চুরির আনন্দে মেতে উঠেন। কিন্তু প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে দেখা যায় চাঁদের দিকে তাকাচ্ছিলেন এবং দুই হাত মুঠ করে উপরের দিকে তুলছিলেন।
সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটার হিসেবে আখ্যায়িত হবার পরও নিজের যোগ্যতাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে পারছিলেন না লিটন। লিটনের ব্যর্থতার জন্য প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স এবং অন্যান্য কোচিং স্টাফদের দিকে আঙুল তোলা হয়েছিলো। যদিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে ৯৫ রান করেছিলেন নয়টি হাফ-সেঞ্চুরি করা লিটন।
এতটাই প্রতিভাবান যে নিজের মানের সাথে মেলে ধরতে পারছিলেন না লিটন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খারাপ ব্যাটিং ফর্মের কারনে সমালোচনার মুখে পড়েন লিটন। এতে পাকিস্তান  সিরিজে  টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
ব্যর্থতার কারনে অনলাইনে ট্রল ও বিদ্বেষ মুলক আচরণের শিকার হন লিটন। তার স্ত্রী এবং পরিবারও এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সমালোচনার তালিকায় ছিলো, যা লিটনকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছিলো।
কিন্তু বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম সবসময় লিটনের পাশে ছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে  সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের স্কোরও করেছেন তিনি। টেস্টের আগেরদিন টাইগার অধিনায়ক মোমিনুল হক বলেছিলেন, ইতিমধ্যেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে পাকিস্তান টেস্টের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন লিটন।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন প্রথম সেশনে যখন ক্রিজে আসেন লিটন, তখন ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিলো বাংলাদেশ। ঐ অবস্থা থেকে দলকে খেলায় ফেরান লিটন। পঞ্চম উইকেটে মুশফিুকর রহিমের সাথে অবিচ্ছিন্ন ২০৪ রানের জুটি গড়েন লিটন। যার মাধ্যমে দিন শেষে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থায় নিয়ে গেছে।
ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স জানান, তার ১১৩ রানের ইনিংসটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো, কারন ইনিংসের শেষ দিকে হাতের ক্রাম্প ও ব্যাথা নিয়ে খেলেছিলেন লিটন।
প্রিন্স বলেন, ‘আজ লিটন কতটা শান্ত এবং সর্তক ছিলো, তা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ। আমার মনে হয়, সবাই সবচেয়ে বেশি নার্ভাস হয়েছিল যখন লিটনের ক্রাম্প শুরু হয়েছিলো। আমরা আশা করছিলাম, দিনের শেষ পর্যন্ত যেন সে তার শরীরকে চালিয়ে নিতে পারে। আজ রাতে নিজেকে সুস্থ করে তুলবেন এবং আশা করি আগামীকাল এগিয়ে যেতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিটন সেঞ্চুরি পাওয়ায় ড্রেসিংরুমের সকলে খুবই খুশি।’
প্রিন্স আরও জানান, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজেভাবে আউট হওয়া সত্ত্বেও তার ব্যাটিংয়ের টেকনিকে বেশ কিছু বিষয় ঠিক করার ছিলো।
তিনি বলেন, ‘আমি টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। টেস্টের প্রস্তুতি নিতে এখানে এসেছিলেন তিনি। আমরা একটি বা দু’টি ছোট টেকনিক নিয়ে কাজ করেছি। তবে বড় কিছু ছিলো না। ব্যাটিং পজিশনে তার দাঁড়ানোর অবস্থার পরিবর্তন করার বিষয় ছিলো। মূলত লাইনে তাকে আরও ভালভাবে দাঁড়াানোর বিষয় ছিলো। আমার মনে হয়, সে ক্রিজে ভালোভাবে দাঁড়াতে পেরেছে। তাকে দেখেস্বাচ্ছন্দ্য মনে হয়েছে। তিনি যখন ভাল ব্যাটিং করেন তখন ব্যাটিং সহজ দেখায়।’
মুশফিকুর রহিমেরও প্রশংসা করেছেন প্রিন্স। পিচের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দারুন ছন্দে ছিলো পাকিস্তানের বোলাররা। যাদের দারুনভাবে সামাল দিয়েছেন মুশি।
প্রিন্স বলেন, ‘আমি মনে করি, ৪০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর আজ ছেলেরা নিজেদের সেরাটা এবং দক্ষতার একটি দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখিয়েছে। শুরুতে বেশ ধৈর্যশীল ছিলেন মুশফিক। সে একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। অনেক তরুণ খেলোয়াড় কম স্ট্রাইক-রেটে আতঙ্কিত হতে পারে এবং বলকে সীমানা ছাড়া করতে পারেনি। তবে মুশি একজন অভিজ্ঞ টেস্ট খেলোয়াড়, সে শান্ত ছিল। মুশি জানতেন টেস্টে দ্রুত সময়ের মধ্যে রান আসতে পারে। দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি।’

Print Friendly, PDF & Email