April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

হৃদয়নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের শুভ জন্মদিন

ডেস্ক: আজ বুধবার, বাঙালির হৃদয়নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্ম গ্নরহন করেন। তার ডাক নাম ছিল কাজল৷ বাবার রাখা প্রথম নাম শামসুর রহমান হলেও পরে তার বাবা ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ৷
আকস্মিক ক্যান্সার ক্ষণজন্মা এই কথাশিল্পীকে আনন্দময় জীবন কেড়ে নেয় ২০১২ সালে। সেই থেকে প্রকৃতিও তার প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় ম্লান হয়ে আছে। তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তি আজ বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ। তাই হুমায়ূন-মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি চিরায়ত হয়ে আছেন তার আশ্চর্যসুন্দর রচনাবলির মাধ্যমে।
বাবার বদলির চাকরিসূত্রে হুমায়ূনকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে শিক্ষজীবন শেষ করতে হয়েছে। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে থেকে অনার্স, মাস্টার্সে অসামান্য ফলাফল করেন। পরে রসায়ন বিভাগেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। উচ্চতর পড়াশুনা করার জন্য আমেরিকার নর্থ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানেও সাফল্যের সাথে উচ্চতর গবেষণা শেষ করেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পিতাকে হারিয়ে তারা গোটা পরিবারসহ অকূল পাথারে পড়ে যান। পরে সরকার ও বিভিন্ন শুভান্যুধায়ীদের সহযোগিতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। জীবনে এতো যে উত্থান-পতন, টানাপোড়েন কিন্তু তার কলম কখনও থেমে থাকেনি।
১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়। সেই উপন্যাস এতোটাই পাঠকপ্রিয় হয় যে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কোনোদিন। আমৃত্যু তিনি ছিলেন বেস্টসেলার বইয়ের লেখক। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মরণব্যাধি ক্যানসারের সাথে লড়ে তিনি মারা যাবার পরও লেখক হিসেবে এখনও এককভাবে কেউ তার সেই শূণ্যতা পূরণ করতে পারেননি।
১৯৮০-১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ধারাবাহিক এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রচনা শুরু করেন তিনি৷ ১৯৮৩ সালে তার প্রথম টিভি কাহিনীচিত্র ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার শুরু হলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়৷ নব্বই দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরো মনোযোগ দেন হুমায়ূন আহমেদ৷
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি৷ এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদিও স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক৷
উপন্যাস, ছোটগল্প, স্মৃতিগ্রন্থ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গান, নাটক, চিত্রনাট্য, ভ্রমণকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা – কোথায় নেই তিনি। সবখানেই তার সব্যসাচী বিচরণ আর জনপ্রিয়তা। রসবোধ আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ৷ তাঁর সৃষ্টি হিমু, মিসির আলী, বাকের ভাই চরিত্রগুলো পেয়েছে ‘অমরত্ব’৷ তাঁর লেখা গানগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে৷
হুমায়ূন আহমেদের চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ছবিগুলোর মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে৷ ‘খেলা’, ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘খাদক’, ‘একি কাণ্ড’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অন্যভূবন’ এর মত নাটকগুলোর আলোচিত ডায়লগ এখনও অনেকের মুখেই শোনা যায়৷
তাঁর টেলিভিশন ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’, ‘নিমফুল’, ‘তারা তিনজন’ ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘সবুজ সাথী’, ‘উড়ে যায় বকপঙ্খী’, ‘এই মেঘ এই রৌদ্র’ এখনও ইউটিউবে খুঁবে বেড়ান অনেকেই৷

Print Friendly, PDF & Email