April 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জনগনের সেবা করতে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য’ নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে নিজের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের দোসরদের ভোটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধাপরাধে যাদের সাজা হয়েছে তাদের দোসরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগকারী, খুনি-সন্ত্রাসীদের নিয়ে যারা আজকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।

১৯৭১ -এ স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন না থাকায় ওউ দলটির প্রায় দুই ডজন নেতা এবার ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন। জোটের প্রার্থী হিসেবে তাদের মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। আবার বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছেন এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কয়েকজন।
শেখ হাসিনা বলেন, “যাদের যুদ্ধ করে আমরা পরাজিত করি, জাতির পিতাকে হত্যার পর তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধৃু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করেছিলেন।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর বিচার বন্ধ করে দিয়ে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। তাদেরকে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা করে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত অর্জিত লাল সবুজের পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের শাস্তির বদলে ‘পুরস্কৃত’ করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যার পর গর্ব করে যারা বলেছিল, আমরা হত্যা করেছি, কে আমাদের বিচার করবে?

“তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিল। জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, শিশু ও নারীকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার না করে বিভিন্ন দূতাবাসে তাদের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে বিচারের পথ বন্ধ করেছিল।”

জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়ায় বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের বিচার চাইতে না পারার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়ায় বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের বিচার চাইতে না পারার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা সে সময় প্রিয়জন হারানোর বিচার চাওয়ারও সুযোগ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “আপনারা একবার ভেবে দেখেন, কারো আপনজন মারা গেলে সবাই বিচার চায়। মামলা করতে পারেন। বিচার চাইতে পারেন।
“আর আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, যখন মামলা করতে যাই মামলা করতে দেওয়া হয়নি। কারণ ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। বিচার করা যাবে না।”

বাংলাদেশ যেন আবার স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে না যায় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “কোটালীপাড়ার মাধ্যমে আমি সমগ্র দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সেই সময় যেন ওই যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, রাজাকার এবং যারা অগ্নিসংযোগকারী তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাহলে তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেবে।
স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যাতে মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন আর তারা ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেইজন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
এই জনসভার মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন। এরআগে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার কবর জিয়ারত করেন শেখ হাসিনা।
বুধবার বেলা ২টার দিকে সড়ক পথে টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রথমেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারতে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারতে শেখ হাসিনা এরপর পরিবার ও দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কবর জিয়ারত এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত ও দোয়ায় শামিল হন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর ভাইয়ের ছেলে শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং আওয়ামী লীগ ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

টুঙ্গীপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা মিলিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকেই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ হাসিনা। এ আসন থেকে তিনি সংসদে গেছেন ছয়বার। এবারের নির্বাচনী প্রচারও শুরু করলেন নিজর আসন থেকেই।

শেখ হাসিনা বলেন, “এটা আমরা প্রথম নির্বাচনী সভা। এই সভার মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে আবেদন জানাই, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। জনগণের সেবা করতে চাই। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন আমি পূরণ করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন নৌকা মার্কায় যাকে যেখানে প্রার্থী করেছি, তাদের ভোট দেবার আবেদন জানাচ্ছি। নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ কখনো বঞ্চিত হয় না। নৌকায় ভোট দিয়ে সবাই সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।

জনসভায় বক্তব্য দেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও রিয়াজ। তারা দুজনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করতে, স্বাধীনতার চেতনা ‘সমুন্নত রাখতে’ এবং দেশের ‘উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে’ নৌকায় ভোট চান।

প্রথম নির্বাচনী সভায় তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন শেখ হাসিনা বলেন,
একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশে আর গরিব থাকবে না। প্রতিটি গ্রাম হবে শহরের মতো। আওয়ামীলীগের তিন মেয়াদে ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “মানুষের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করতে পেরেছি।”

শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে লোকারণ্য হয়ে ওঠে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠ শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে লোকারণ্য হয়ে ওঠে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা অবকাঠামো বাড়ানো, ক্বওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়া, প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, তথ্য-প্রযুক্তির সেবা সস্প্রসারণ ও সহজলভ্য করা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করা, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়া, একটি বাড়ি একটি খামারের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি বাড়ানোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
‘স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ জীবন দেওয়ার জন্য’ বঙ্গবন্ধু যে সংগ্রাম করেছিলেন সেটা বাস্তবায়নই তার লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই নির্বাচনী সফর নিয়ে কোটালীপাড়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। জনসভাস্থল ছেড়েও আশপাশের রাস্তায় মানুষের ভিড় জমে যায়।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র জয়ধরের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।

জনসভা শেষে টুঙ্গীপাড়া ফিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে উঠান বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এখানেই রাতে থাকবেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে বুধবার সকাল ৮টা ২৩ মিনিটে ঢাকার গণভবন থেকে রওনা হয় শেখ হাসিনার গাড়িবহর। মাওয়া হয়ে তিনি টুঙ্গীপাড়ায় পৌঁছান।

আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রত্যয় জানিয়েছেন শেখ হাসিনা । যাত্রাপথের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার দেখা পেতে সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের হাতে ছিল নৌকা মার্কার সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন। শেখ হাসিনা এবং নৌকার পক্ষে বিভিন্ন শ্লোগান দেন তারা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

এবার নিজের জন্মস্থান গোপালগঞ্জ ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির আসন রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) থেকে মনোনয়নপত্র নিয়ে জমা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পরে রংপুরের আসনটি তিনি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দেন।

টুঙ্গীপাড়ায় প্রচার শেষে বৃহস্পতিবার সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। ফেরার পথে প্রায় ১০টি পথসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।

ভাঙ্গার মোড়, ফরিদপুরের মোড়, রাজবাড়ী রাস্তারমোড় (রাজবাড়ী জেলা), আরোয়া ইউনিয়ন, পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ পৌরসভা, রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ (ধামরাই) ও সাভারের জালেশ্বর মৌজার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এসব পথসভা হওয়ার কথা।

Print Friendly, PDF & Email