ঝুমকি বসু : যখন বাপ্পা ছোট ছিল, তখন জাকিয়া ভাবতো ওর মতো দুরন্ত শিশু বোধহয় আর হয়না। এটা ভাঙছে, ওটা ধরছে, দাদুর সঙ্গে কুস্তি করছে- ওকে সামলাতে সামলাতেই জাকিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত।
এখন বাপ্পার বয়স নয় বছর। বেশ বড়ই হয়ে গেছে। জাকিয়া ভেবেছিল বড় হয়ে গেলে ঠিক হয়ে যাবে বাপ্পা। কিন্তু এখন বদলে গেছে তার দুরন্তপনার ধরন। এখন আর ওর ক্ষেত্রে দুষ্টু কথাটা খাটে না, এককথায় ওকে বলা যায় আগ্রাসী। সবসময় মারমুখী হয়ে আছে। বাসায় কোনো ছোট ছেলেমেয়ে এলেই তার সঙ্গে মারামারি শুরু করে দেয়। এমনকি স্কুল থেকেও নালিশ পেতে পেতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় জাকিয়ার।
মাঝে মাঝে রাগের মাথায় দু-একটা চড়থাপ্পড় মারতে গেলেও ছেলে এমনভাবে তেড়ে আসে, তা দেখে ভয়ে বুক শুকিয়ে যায় জাকিয়ার। মন নেই পড়াশোনাতেও। মাঝে মাঝে জাকিয়া ভাবে সন্তানের এমন আগ্রাসী ব্যবহারের জন্য কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবে। কিন্তু নিজের ছেলেকে অসুস্থ ভাবতেও তার মন সায় দেয় না।
আধুনিক জীবনযাত্রার প্রভাব যখন প্রকট হয়ে ওঠে, শিশুদের কোমল মনে তখনই দেখা দেয় অ্যাগ্রেশন। সবার চেয়ে সেরা হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে এই শিশুদের জীবনে স্ট্রেস, টেনশন, ফ্রাস্টেশন সব কিছুই হয়ে যায় মাত্রাছাড়া। এছাড়া বাবা-মায়ের প্রত্যাশার বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত শিশুদের ব্যবহার হয়ে ওঠে হিংসাত্নক। এই আগ্রাসী মনোভাবের পিছনে যে কারণটা বড় হয়ে দাঁড়ায়, তা হল অন্যকে ব্যথা বা কষ্ট দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা। এসব শিশুরা তাদের আগ্রাসী ব্যবহার ব্যক্ত করে কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে।
* মারামারি করা (বিশেষত নিজের থেকে ছোট, দুর্বল ছেলেমেয়ে বা পশুপাখিকে মারা)।
* কোনো কারণ ছাড়াই অন্যদের লাথি মারা বা থুতু ছিটানো।
* অকারণেই নিজের বা অন্যের জিনিসপত্র নষ্ট বা ক্ষতি করা।
* রেগে গেলে হাতের কাছে যা পায় তা ছুঁড়ে মারা।
আপনিও কি সন্তানের নামে স্কুল থেকে অভিযোগ পাচ্ছেন? অন্যদের সঙ্গে সে কি মারামারি করছে? আপনার সন্তান রেগে গিয়ে কি জিনিসপত্র ভাঙছে? সন্তানের এমন আগ্রাসী মনোভাবের জন্য লজ্জায় মুখ লুকাতে ইচ্ছা হয়? আপনার জন্য রয়েছে কিছু পরামর্শ।
সন্তানের আগ্রাসী মনোভাবের কারণ
* আত্মবিশ্বাসের অভাব।
* ফ্রাস্ট্রেশন বা স্ট্রেস।
* নিজের সমস্যা ঠিকমতো বোঝাতে না পারা।
* পরিবারের কোনো সদস্য বা চেনা মানুষের আগ্রাসী ব্যবহার নকল করার চেষ্টা।
* আগ্রাসী শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা।
* যৌন নিপীড়ন।
* বাবা-মায়ের উপর অতিরিক্ত রাগ বা অভিমান।
* সবার থেকে মনোযোগ না পাওয়া।
* টিভি বা কম্পিউটার গেমসের অতিরিক্ত প্রভাব।
আপনার করনীয়
* যদি আপনার সন্তানের মধ্যে এমন আগ্রাসী মনোভাব নজরে আসে, তাহলে খুঁটিয়ে দেখুন এই ব্যবহার কি ওর সাধারণ ব্যবহার নাকি কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্তে ও আগ্রাসী হয়ে ওঠে।
* এমন ব্যবহার যদি দেখেন ওর ব্যক্তিত্বের অঙ্গ হয়ে উঠেছে, সেক্ষেত্রে ওর ভেতর জমে থাকা এনার্জি খরচ করার একটা ইতিবাচক উপায় খুঁজুন। ফুটবল, টেনিস, ক্রিকেট বা বাস্কেটবলের মতো খেলায় উৎসাহ দিন।
* যদি দেখেন কোনো বিশেষ মুহূর্তে ও আগ্রাসী হয়ে উঠছে, তাহলে এর পিছনে কী কারণ আছে তা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। অনেকসময় বাসার কাছের মানুষেরা বা শিশুর বন্ধুরা মজা করার জন্য কোনো বিশেষ নাম ধরে ডেকে শিশুকে ক্ষেপিয়ে তোলে। এমন সামান্য কোনো ঘটনাও শিশুর আগ্রাসী হয়ে ওঠার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই জন্য ও কোণঠাসা বা অপ্রস্তুত হয় এমন ব্যবহার যেন কেউ ওর সঙ্গে না করে তা খেয়াল রাখুন।
* অনেকসময় শিশুরা না বুঝেই নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। কিন্তু যদি দেখেন শিশু কোনো আগ্রাসী ব্যবহার করছে, তাহলে তার প্রতিবাদ করুন। ওই শিশুকে সেখান থেকে সরিয়ে দিন। মারধোর বা বকাঝকা করবেন না কিন্তু আপনার আচরণে ওকে বুঝিয়ে দিন এই ব্যবহার আপনি একেবারেই সমর্থন করছেন না।
* বাসার বড়রা যদি কথায় কথায় চিৎকার করেন বা জিনিসপত্র ভাঙ্গেন, সেই প্রভাব শিশুদের উপর পড়বেই। নিজেদের সংযত রাখুন।
* খুব রাগ হলে শিশুকে ওর পছন্দের কিছু করতে দিন যাতে ও মজা পায়।
* ওর মুখে যদি কোনো খারাপ ভাষার প্রয়োগ শোনেন তাহলে ওকে বুঝিয়ে বলুন এ ধরনের কথা বলা উচিত নয়।
* ছোট থেকেই শিশুকে সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন। নাচ-গান, ছবি আঁকা, অভিনয় করা ওর মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে।
* কোনোভাবেই যদি দেখেন সন্তানের ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে পারছেন না, তাহলে সাহায্য নিন কোনো অভিজ্ঞ কাউন্সিলরের।
সত্র:রাইজিংবিডি/
এ বিভাগের আরো..
দেয়ালে আঁকলে বকা না দিয়ে বুদ্ধি খাটান
ঠোঁটের পেছনে খরচ প্রায় ৪ কোটি টাকা