May 17, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

১০ জেলায় মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত আরো ১৫

ডেস্ক: চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে  ১০জেলায় আরো অন্তত ১৫জন নিহত হয়েছে।

পুলিশ বলেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ছয় জেলায় বন্দুকযুদ্ধ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পুলিশ ও র‌্যাবের গুলিতে রাজধানী ঢাকায় তিনজন, চুয়াডাঙ্গায় একজন, কক্সবাজারে একজন, নড়াইলে একজন, কুমিল্লায় একজন, চট্টগ্রামে একজন, পাবনায় একজন ও সিরাজগঞ্জে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে যশোরে দুইজন ও মাগুরায় তিনজন নিহত হয়েছে।

পুলিশ আরো বলেছে, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল এবং তাদের মধ্যে প্রায় সবার বিরুদ্ধেই থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলাও রয়েছে।

রাজধানীর ভাষানটেকে দেওয়ানপাড়া লোহার ব্রিজের কাছে মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের সঙ্গে মাদক ব্যাবসায়ীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো বাপ্পি (৩৮), আতাউর রহমান আতা (৪০) ও মোস্তফা হাওলাদার (৪৫)। র‌্যাব জানায়, এদের মধ্যে আতা সাভারের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, আমরা জানতে পেরেছি কসাই মোস্তফার নামে ৭-৮টি মামলা রয়েছে। বাপ্পির নামে হত্যা মামলাসহ মাদকের মামলা রয়েছে। সে প্রতিদিন শ’খানেক ইয়াবা বিক্রি করতো। তবে নিহতদের বিষয়ে সার্বিক তথ্য খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি।

এর আগে রাতে ভাষানটেকে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব-৪ এর সদস্যরা। তখন মাদক ব্যবসায়ী ও র‌্যাব সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী তানজিল হোসেন (৪০) নিহত হয়েছে। বুধবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ি নতুনপাড়া এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি শুটারগান, চার রাউন্ড গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে। এ খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশের একটি দল ভোর পৌনে ৩টার দিকে সেখানে পৌঁছলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালাল।

এরপর সদর থানা থেকে পুলিশের আরো একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। প্রায় আধাঘণ্টা পর একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে সড়কের একটু দূরে জঙ্গলের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তানজিলকে উদ্ধার করে। পরে দ্রুত সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত আব্দুল খালেক জানান, তানজিল চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের মোস্ট ওয়ানটেড তালিকাভুক্ত। তার নামে সদর থানায় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের সময় উপ-পরিদর্শক রবিউল হক ও কনস্টেবল আব্দুস সবুরও আহত হয়েছে।

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রাম থেকে দুইজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তারা নিহত হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, নিহতদের মধ্যে একজন বেনাপোলের ভবেরবেড় গ্রামের মাজহারুল ইসলামের ছেলে লিটন হোসেন (৩৫)। তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।

ওসি বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ জানতে পারে বড়আঁচড়া গ্রামে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলছে। পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুই জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এছাড়া ১০ কেজি গাঁজা, একটি অস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজার সদর থানার কবিতা চত্বর এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মজিবুর রহমান (৪২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি ঘটে। মজিবুরের নামে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ১০ টি মামলা রয়েছে।

র‍্যাব-৭-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন বলেন, মাদক কেনা-বেচা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে তারা সেখানে অভিযান চালান। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সেখানে অবস্থানরত মাদক ব্যবসায়ীরা র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‍্যাবও গুলি ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়। ঘটনাস্থলে প্রায় চার থেকে পাঁচজন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। গোলাগুলির একপর্যায়ে সবাই পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে মজিবুরের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পড়ে থাকে।

এছাড়া সেখান থেকে ছয় হাজার পিস ইয়াবা বড়ি, একটি দেশি ওয়ান শুটার, তিন রাউন্ড গুলি, দুইটি গুলির খালি খোসা উদ্ধার করে র‍্যাব–৭।

নড়াইলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সজীব শেখ নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, নড়াইল শহরতলির মালিবাগ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সদর থানা ও ডিবি পুলিশ সেখানে যৌথ অভিযানে চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়লে অপরাধীরা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় চার কর্মকর্তাসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গুলিবিদ্ধ এক মাদক ব্যবসায়ীকে পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত পুলিশ সদস্যদের সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি একটি রিভলবার, দুই রাউন্ড গুলি, দুইটি রামদা, একটি গাছিদা এবং ২১৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।

মাগুরা শহরের বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকা থেকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত তিন মাদক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। বুধবার রাত ২টার দিকে এ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাগুরা সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন জানান, শহরতলীর বাটিকাডাঙ্গা মাঠপাড়া এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনে টহল পুলিশ সেখানে গিয়ে তিন ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে। পুলিশ দ্রুত তিনজনকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। মাগুরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তিন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নিহতরা হলেন, শহরের ইসলামপুর পাড়ার রাজ্জাক ঢালীর ছেলে রায়হান ঢালী ওরফে ব্রিটিশ (৩০), ভায়না এলাকার মহিউদ্দিন চোপদারের ছেলে বাচ্চু চোপদার (৫৫) ও শহরের নতুন বাজার বৈরাগী পাড়ার খোকন অধিকারীর ছেলে কিশোর অধিকারী ওরফে কালা।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, রায়হান ওরফে ব্রিটিশ ও কিশোর অধিকারী কালার নামে ১০ ও বাচ্চু চোপদারের নামে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে। এ সময় সেখান থেকে ৩২০ গ্রাম হেরোইন, এক কেজি গাজা, ছয় বোতল ফেনসিডিল, রাইফেলের ছয়টি গুলি, আটটি গুলির খোসা উদ্ধার করে।

কুমিল্লার বুড়িচং থানা পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রুশমত আলী নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের লরিবাগ রাস্তার মাথায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় এসআই মোয়াজ্জেম, এএসআই সজীব ও কনেস্টবল আল আমিন আহত হয়েছেন। বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাদকের একটি বড় চালান আসার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানা পুলিশের একটি টিম উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের লরিবাগ রাস্তার মাথায় গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ওপর হামলা করে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশও আত্মরক্ষায় গুলিবর্ষণ করলে রুশমত গুলিবিদ্ধ হয়।

তিনি বলেন, রুশমতকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩০ কেজি গাঁজা, একটি পাইপগান ও এক রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে। রুশমতের বিরুদ্ধে সাতটি মাদক মামলা রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরের পলোগ্রাউন্ড এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোহাম্মদ ইসহাক (৩৭) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে চার হাজার পিস ইয়াবা, কাতুর্জসহ একটি ওয়ান শ্যুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঘটনা ঘটেছে। ইসহাক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মাদকের নয়টি ও কয়েকটি হত্যা মামলাসহ মোট ১৯টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মিমতানুর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরের টাইগারপাস পলোগ্রাউন্ড এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যাবসায়ীদের একটি দল তাদের ওপর গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা কিছুক্ষণের জন্য পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়ার মরদেহ দেখতে পায়।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আশান হাবিব (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় একটি ওয়ান শ্যুটার গান, এক হাজার পিস ইয়াবা ও ২০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের ঝাঐল ওভার ব্রিজের পাশে একটি ইউক্যালিপটাস খেতে বুধবার ভোরে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। হাবিব কামারখন্দ উপজেলার কামারখন্দ হাটপাড়া গ্রামের ইজার উদ্দিনের ছেলে।

র‌্যাব-১২ সিরাজগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার সাকিবুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পাবনার বেড়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইজ্জত আলী প্রামানিক (২৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচ পুলিশ সদস্য। জব্দ করা হয়েছে বেশকিছু অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, ইজ্জত আলী কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মাদক কারবারী ও ডাকাত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৪টি মামলা রয়েছে। সূত্র:বিবার্তা।

Print Friendly, PDF & Email