May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

শৈলকুপায় অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলনে হুমকির মুখে বসতবাড়ী ও ফসলি জমি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের শৈলকুপার কাতলাগাড়ী ঘাটের গড়াই নদীর বুক থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিনিয়ত শতাধিক ট্রাক বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি ও বালু শ্রমিকের পাশাপাশি সেখানে ৪ থেকে ৫ টি ভেকু ম্যাশিনের মাধ্যমেও নদীর বুক ও কিনারা খুড়া হচ্ছে। এতে করে ফসলি জমি ও বসতবাড়ী হুমকির মুখে পড়ছে। টানা বৃষ্টিতে ও নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে আশপাশ এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আশপাশ এলাকায় ধুলি ধোঁয়া-শব্দ দূষন বৃদ্ধি পেয়েছে। নাজেহাল পরিস্থিতিতে পড়েছে শিশু হতে একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী। যানজট ও গাড়ীর ধুলায় কাতলাগাড়ী বাজারের প্রধান সড়কে থাকা ঔষুধ, হোটেল, মুদিসহ বিভিন্ন খাদ্য জাতীয় দোকানীরা নির্বিকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। নদীতে ভেকু মেশিন লাগিয়ে দেদারছে গাড়ী ভর্তি বালি তুলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ইটভাটা, রোড, ব্রীজ কালভার্টসহ পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। প্রতিদিন কাতলাগাড়ী বাজারের অদূরে গড়াই নদীর অবৈধ বালি মহল ব্যবহার করে নাটা হাম্বা, মিনি ট্রাক, বড় ট্রাক মিলে প্রায় শতাধিক গাড়ী দিনভর বালি নিয়ে যায় দূর দূরান্তে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, গড়াই নদীর কৃষ্ণনগর চর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে নিয়মিত বালি বিক্রি করে আসছে প্রভাবশালী মহল। ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্তও ফিটনেস বিহীন ছোট বড় নানা প্রকার যানবাহনে এ বালি ও ফসলী জমির মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন যায়গা বিক্রি করে থাকে।
কাতলাগাড়ী বাজারের প্রধান সড়ক ঘেঁষে মৌবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাতলাগাড়ী নি¤œমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, কাতলাগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাতলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাতলাগাড়ী নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসা, গোয়ালবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাতলাগাড়ী ডিগ্রি কলেজ ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ও ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে ৩ সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত লেখাপড়া করে। বাজার কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে উপজেলার বৃহৎ কাঠশিল্প কারখানা ও দুটি বাজার। যার মধ্যে কাতলাগাড়ী নতুন বাজারেই রয়েছে কয়েক’শ ব্যবসায়ী এবং বাজার ঘেঁষেই রয়েছে তাঁতপল্লী এলাকা। জনবহুল এ বাজারে পাউবো’র প্রধান সেচখালে রয়েছে বহু পুরনো জরাজীর্ণ একটিমাত্র ঝুকিপূর্ণ সেতু। রাতদিন বালু ও মাটি ভর্তি ভারী যান চলাচলের কারনে যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি।
জনগুরুত্বপূর্ণ কাতলাগাড়ীর দুটি বৃহৎ বাজারে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারন মানুষের সমাগম লেগেই থাকে। এর মাঝেই চরম ঝুঁকি নিয়ে চলে বালি ব্যবসায়ীদের ফিটনেস বিহীন অদক্ষ ড্রাইভারদের বেপরোয় গাড়ী চলাচল। প্রতি বছরই এসব বালি বোঝাই গাড়ীর চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণহানী ঘটার রেকর্ড আছে।
যখন একমুখি এ সরু রাস্তায় কোন বালি বোঝাই গাড়ী বিকল হয়ে পড়ে তখন দূর্ভোগ চরমে ওঠে। ছোট খাটো দূর্ঘটনা যেন এ রাস্তার নিয়মিত চিত্র। বালিমহল ব্যবহারকারীরা সরকারি দলের প্রভাবশালী হওয়ার কারনে স্থানীয় জনসাধারণ ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাইনা।
নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভূমিধ্বস, পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি গড়াই নদীর এ বালুমহাল দখলকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামাও কম ঘটেনি। দিনশেষে হাজার হাজার টাকার বালি বিক্রির টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়েও রয়েছে নানা হামলা, মামলা সংঘর্ষের ঘটনা।
সচেতন এলাকাবাসীর দাবী সত্বর অবৈধ বালুমহাল বন্ধ করে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখবে একই সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষাসহ বাজারের পরিবেশ দূষণ থেকে এলাকাবাসীর মুক্তি মিলবে।
চরে কর্মরত এক বালু শ্রমিক জানান, প্রতিটি বড় ট্রাক ৫’শ টাকা, ট্রাক্টর ইঞ্জিনচালিত গাড়ী ৪’শ টাকা, নাটা হাম্বা ৩৫০ টাকা ও অন্যান্য সকল পরিবহন ২২০ টাকা হারে নিয়মিত বালি বিক্রয় হয়। এ চরে নিয়মিত শতাধিক যানবাহন বালি পরিবহনের সাথে জড়িত রয়েছে।
কৃষ্ণনগর, বড়–রিয়া ও কীর্ত্তিনগর এলাকার ভূক্তভোগী সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বালি ও মাটি কাটার ফলে গড়াই নদীর এপারে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নি:স্ব হয় মানুষ, নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ফসলী জমি।
বালি উত্তোলনকারী কৃষ্ণনগর গ্রামের আতিয়ার ও মাটি ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন জানান, গড়াই নদীর চরে জমির চারিদিক থেকে ভূমি খেকোরা মাটি কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর তাদের নিজ জমি নদীতে বিলিন হয়ে যায়। যে কারনে নিজেদের সংসার চালানোর তাগিদেই মাটির ব্যবসা শুরু করেছে। তাছাড়া গড়াই চরটি পার্শ্ববর্তি খোকসা থানাধীন, বালি উত্তোলনের সাথে ওপারের ব্যবসায়ীরা বেশী জড়িত।
খোকসা বেতবাড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার জানান, সীমানাটি খোকসার হলেও নদীর ওপার অংশে চর হওয়ার কারনে চরের প্রায় সকল সুযোগ সুবিধাই ভোগদখল করেন শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নের মানুষ। তিনি বলেন, এ চরকে ঘিরে অনেকবার খোকসা থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। অবস্থানগত এবং নানা আইনী জটিলতার জন্য বালি খেকোদের হাত থেকে নদী ও পরিবেশ রক্ষা করা তার একার পক্ষে সম্ভব হয়না।
এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা উসমান গনি বলেন, শৈলকুপা অংশে কেউ গড়াই নদী থেকে বালি উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া খোকসা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে যৌথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী পাড়ের ফসলি জমি ও শত শত বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আগেই অবৈধ বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে এখনই প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ বলে ভূক্তভোগীরা মনে করেন।

Print Friendly, PDF & Email