May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

বাজেট ‘গণবিরোধী’ দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটকে ‘গণবিরোধী’ বলে দাবি করেছে সংসদে বাইরে থাকা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজেট পাসের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এ দাবি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘আজকে যে বাজেট পাস হলো সেটি গণবিরোধী, উদ্ভট তামাশা, জীবনযাত্রার মানকে নিম্নমুখী করা, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ মানব উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ও জনগণের পকেট কাটার বাজেট। আমরা এ প্রতিক্রিয়াশীল বাজেটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

রিজভী বলেন, ‘জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে। আজ ভোটারবিহীন সরকারের সংসদে নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে এ বাজেট পাস করা হয়। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এ বাজেট পেশ করেন।’

‘বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকার সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংসদে বলেছেন ভিক্ষা অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে তারা বেরিয়ে এসেছেন। তারা নাকি নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতা নির্মাণ করেছেন। অথচ এবারই বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশি ঋণ ৪৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা আর অনুদান হিসেবে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে বলে বাজেটে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ হ্রাস পেতে পারে এবং সুদ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে। এতে প্রতিয়মান হয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ভাওতাবাজি।’

মূলত লুটপাটের জন্যই বিশাল ঘাটতির এ বাজেট পাস করা হয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘উন্নয়নখাতে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তার বেশীরভাগই লুটপাট হয়। সুপ্রিমকোর্টের প্রধানবিচারপতি এস কে সিনহা কয়েকমাস আগে প্রকাশ্যেই তা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, উন্নয়নের ৬০ ভাগ টাকা যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে। বাকী ৪০ ভাগেরও কাজ হয় না কারণ এর মধ্যে ইনকামটেক্স, ভ্যাট রয়েছে। অর্থাৎ উন্নয়নকাজের ২৫ ভাগ কাজও হয়না। সুতরাং বলা যায়, আগামী ভোটের আগে ক্ষমতাসীন দলের লুটের বাজেট সংসদে পাস হয়েছে।

‘অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে রাজস্ব আয় নির্ভর বাজেট হলো গরীব মারার বাজেট। কারণ রাজস্ব আয় যেসব খাত থেকে ধরা হয়েছে তা গরীবের পকেট কেটেই আদায় করা হবে। আবার বাজেটে যে বিশাল অংকের ঘাটতি দেখানো হয়েছে তা পূরণ করা অসম্ভব। আবার বাজেটে যে কাল্পনিক প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে তাও বাস্তবসম্মত নয়। বিশ্বব্যাংক বিষযটি নিয়ে আগেই বলেছেন ৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কাল্পনিক। যা বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। সুতরাং এক কথায় বলা যায় গরীব মারার এ বিশাল ঘাটতির বাজেট অলীক এবং জনগণকে ধোকাবাজির শামিল,’ যোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পুরক শুল্ক আইন ২০১২ আগামী ২ বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মনে হয় সরকার আবারও যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতায় আসার খায়েশ পোষণ করছে এবং ক্ষমতায় এসে পুণরায় সে আইনটি চালু করে জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে বলে মনে হয়। এ আইন দু’বছরের জন্য স্থগিত করা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email