May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

প্রিয় আনিসুল হক, আমি আপনার একজন ভক্ত: অভিনেতা কল্যাণ

ডেস্ক: প্রথম আলোর প্রধান ফটোসাংবাদিক জিয়া ইসলামকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার অভিনেতা কল্যাণ কোরাইয়া জামিন পেয়েছেন।
অভিনেতা কল্যাণ ফেসবুক পাতায় পুরো ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
কল্যাণের ফেসবু স্ট্যাটাসটি হুবুহ তুলে ধরা হলো।
“আমার জীবনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবচেয়ে কঠিন ঝড়টি নিয়ে কিছু কথা আমি বলতে চাই, যে কথাগুলো জানা আপনাদের জন্য হয়তো জরুরী না, কিন্তু কথাগুলো বলা আমার জন্য জরুরী। আমি বলতে চাই- আইনের নামে আমার ও আমার পরিবারের উপর দিয়ে অকারণে যে সীমাহীন অবিচার হয়েছে সেই ঘটনাটা। আমি লিখতে পারিনা, হয়তো গুছিয়ে সবকিছুর বর্ণনা দিতে পারবো না, হয়তো আমার লেখায় অনেক বানান ভুল থাকবে, কিন্তু তারপরেও আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি – আমি যে অন্যায়ের শিকার হয়েছি তা বর্ণনা করার।”
“৯ জানুয়ারি রাতে ( ১০ জানুয়ারি বলা যায়, যেহেতু রাত ১২ টার পরের ঘটনা) আমি আর আমার বন্ধু রসি তেঁজগাও থানার পাশে একটা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই। আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি আমি নিজেই চালাচ্ছিলাম আর আমার পাশের সিটে বসে ছিলো আমার বন্ধু রসি। রডবাহী একটি ট্রাকের পেছনে আমার গাড়িটি ঢুকে যায়, রসি মাথায় বেশ গুরুতর আঘাত পায়, আমি শারীরিকভাবে খুব একটা আঘাত না পেলেও, আমার সারা শরীরে আমার গাড়ির সামনের কাঁচ এসে পড়ে। আশেপাশের মানুষজন দ্রুত রসিকে আর আমাকে গাড়ি থেকে বের করে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। একদিকে আমার বন্ধু রসি আহত হয়েছে, অন্যদিকে আমার গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশেপাশের মানুষজনকে দিয়ে রসিকে আল রাজি হাসপাতালে পাঠালাম চিকিৎসার জন্য, আর আমি গাড়িটি রাস্তার পাশে নিরাপদ জায়গায় রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম, যাতে রাস্তায় জ্যাম না লাগে ও গাড়িটিও নিরাপদে থাকে। ইতোমধ্যেই আমি আমার বাবা ও দুলাভাইকে ফোন দিয়ে দুর্ঘটনার কথা বললাম। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন রকম চালানোর উপযোগী ছিলো। বাসা খুব কাছে হওয়ায় বাবা ও দুলাভাইয়ের পরামর্শে গাড়িটি নিয়ে কোন মতে বাসায় আসলাম। বাসায় গাড়িটি রাখার পর বাবা আর দুলাভাইকে নিয়ে আল রাজি হসপিটালে গেলাম রসিকে দেখতে। সেখানে গিয়ে ফোন করে জানতে পারি, রসিকে আল রাজি হসপিটাল থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা ঢাকা মেডিকেলে যেতে যেতে রাস্তায় আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে গাড়ি এক্সিডেন্ট এর কোন রোগী এসেছে কিনা! তখনো আমি জানি না, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া ভাই পান্থপথে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কে এক্সিডেন্ট করেছে। আমি উত্তর দিলাম, আমার বন্ধু এক্সিডেন্ট করেছে। কিভাবে এক্সিডেন্ট করেছে – এরকম প্রশ্নও করলো কয়েকজন। আমি বললাম, আমার গাড়িতে এক্সিডেন্ট করেছে। পরবর্তীতে, এই ঘটনাকে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলা হলো। আমার গাড়িতে আমার বন্ধু এক্সিডেন্ট করেছে – এই ব্যাপারটাকে বানিয়ে ফেলা হলো, আমার গাড়িতে প্রথম আলোর জিয়া ভাইকে চাপা দেওয়া হয়েছে।”
“সচেতন বা অবচেতনভাবে আমার উপর ক্ষেপে উঠলো প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ, অন্য পত্রিকা ও চ্যানেলেরও অনেক সাংবাদিক আমার উপর ক্ষেপে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে লেখালেখি শুরু করে দিলেন। পরের দিন আমার বাসায় পুলিশ পাঠানো হলো, পুলিশের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে প্রথমে তেজগাঁও থানা ও পরবর্তীতে কলাবাগান থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। আমার বিরুদ্ধে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ মামলা করলো, আমাকে গ্রেফতার করা হলো। গ্রেফতারের পর আমাকে ৬ দিন জেলে কাটাতে হলো। এখন আমি জামিনে মুক্ত আছি, প্রতি মাসে আদালতে আমাকে হাজিরা দিতে হচ্ছে।”
“প্রথম আলোতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, আমি মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে জিয়া ভাইকে চাপা দিয়েছি। প্রশ্ন হলো, আমি যদি মদ খেয়ে বা না খেয়ে গাড়ি চালিয়ে জিয়া ভাইকে গাড়িচাপা দিয়ে থাকি, তাহলে কেনো গাড়িচাপা দেওয়ার পর ঢাকা মেডিকেলে গেলাম? আর ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে যদি আমি জিয়া ভাইকে গাড়িচাপা দেওয়ার (?) ঘটনা স্বীকার করি, তবে সেখানে আমাকে কেন কেউ আটকালো না? সেখানে তো অনেক সাংবাদিক ছিলেন, তারা কেন তাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আমাকে এক্সিডেন্টের ব্যাপারে বিষদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না? আমি যদি কোন সাংবাদিকের কাছে জিয়া ভাইকে গাড়িচাপা দেওয়ার কথা বলে থাকি, তাহলে কে সেই সাংবাদিক, তাঁর নাম পরিচয় ও তাঁর ভাষ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেলো না?”
“কি অপরাধ করেছেন আমার মা? আমার মাকে কেনো কাঁদানো হলো, কেনো তাকে থানায় গিয়ে মদ্যপ ও লম্পট ছেলের মা বলা হলো? আমার মায়ের চোখের জলের দাম কিভাবে দিবেন? ওই ঘটনার পর থেকে আমার মায়ের শারীরিক অবস্থার যে অবনতি হয়েছে, তাঁর উপর যে মানসিক নির্যাতন হয়েছে তার দায়ভার কে নিবে? আমার বিরুদ্ধে লেখার আগে আমার মোবাইল ট্রাকিং করে ঘটনার সময় আমার অবস্থান কেনো জেনে নেওয়া হলো না? ঘটনার দিনে ওই সময়ে আমি পান্থপথে ছিলাম নাকি ছিলাম না তা তো আমার মোবাইল ট্রাকিং করেও বের করা যেতো। এবং এরপর আমি দোষী হলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। কিন্তু সম্পূর্ণ অনুমানের উপর ভিত্তি করে আমার জীবনটা নষ্ট করে দেওয়ার যে অপচেষ্টা করা হলো তা কতোটা মানবিক? অস্বীকার করার কোন উপায় নাই, এই অপচেষ্টা অনেকাংশেই সফল হয়েছে। সামাজিকভাবে আমি ও আমার পরিবার হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি, যার ফলাফল বাজেভাবে প্রতিনিয়ত ভোগ করছি। আমার এক্সিডেন্ট নিয়ে এটিএন নিউজ আওয়ার এক্সট্রাতে সাংবাদিক মুন্নি সাহা আমার ওই রাতের মোবাইল ট্রাকিং প্রকাশ করেছেন। আপনারা যারা দেখেন নাই, তারা দেখে নিতে পারেন, অনেক কিছুই স্পষ্ট হবে।”
“আমি আর কথা বাড়াবো না, শুধু দুইজন মানুষকে উদ্দেশ্য করে দুটি কথা বলবো, মানুষ দুইজন হলো- আনিসুল হক ও জিয়া ইসলাম।”
“প্রিয় আনিসুল হক, আমি আপনার একজন ভক্ত। আপনার মা উপন্যাস আমার খুবই প্রিয়। আপনি অনুমানের উপর ভিত্তি করে আমার বিরুদ্ধে যা যা লিখেছেন তা নিয়ে আমার কোন দুঃখ নাই। আপনি দয়া করে, একদিন সময় করে আমার বাসায় আসুন, আমার মায়ের সাথে কথা বলে যান প্লিজ। আমার ধারণা, আপনার সাথে কথা বললে আমার মায়ের ভালো লাগবে। যদি আমার বাসায় আসেন তাহলে আমার বুকসেলফে রাখা আপনার লেখা মা উপন্যাসে একটা অটোগ্রাফ দিয়েন।”
“প্রিয় জিয়া ইসলাম, যে দুর্ঘটনা আপনার জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে, সে দুর্ঘটনা আমার জীবনটাকেও এলোমেলো করে দিয়েছে অথচ এ দুর্ঘটনায় আমাদের দুইজনের কারওই কোন দোষ নাই। একদিন আমাকে সময় দিন ভাই, আমি আর আপনি চলেন আড্ডা দেই। আসুন আড্ডা দিতে দিতে হিসেব মিলাই কার জীবন কতোটা এলোমেলো হয়েছে।”
“ভালো থাকুন সবাই। যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”

Print Friendly, PDF & Email