April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

লন্ডন হামলা: এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে

ডেস্ক: ব্রিটেনে নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে ‘সন্ত্রাসী’ হামলায় রক্তাক্ত হলো যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন।
লন্ডন ব্রিজ ও বারো মার্কেটে শনিবার রাতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৮ জন।
এ ঘটনাকে ব্রিটেনের পুলিশ সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করেছে। ঘটনাটিকে ভয়াবহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে।
কিছুক্ষণ আগে ডাউনিং স্ট্রিট -এ এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে বলেছেন যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে সবাইকে একত্রিত হতে হবে।
এ হামলার পর ঘটনা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে।
কী ঘটেছিল?
শনিবার ব্রিটিশ সময় রাত দশটার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। লন্ডন ব্রিজে পথচারীদের ওপর ভ্যান চালিয়ে দেয়া হয়েছে ও অন্যদিকে বারো মার্কেটে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষের ওপর ছুরি দিয়ে হামলা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় সশস্ত্র পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স।
ঘটনার পর লন্ডন ব্রিজ ও পরে লন্ডন ব্রিজ রেল স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়।
পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
ঘটনার সময় বিবিসির সাংবাদিক হলি জোন্স লন্ডন ব্রিজে ছিলেন।
তিনি বলেন, একজন পুরুষ “ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে” গাড়িটি চালাচ্ছিল।
“আমার ডান দিক দিয়ে গাড়িটি ঘুরে গেল এবং পাঁচ থেকে ছয়জনকে আঘাত করলো”।
ওই গাড়িটি বারো মার্কেটের দিকে চলে গেল এবং সেখানে কজন মানুষের ওপর ছুরি দিয়ে হামলা চালালো হামলাকারীরা।

লন্ডন ব্রিজ থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় লন্ডন হামলা

লন্ডনের জমজমাট বারো মার্কেটে যখন পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষের ওপর ছুরি দিয়ে হামলা হলো তখন ওই এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন লিয়াম।
ওই ঘটনার সময়ই তার চোখ যায় জানালায়। জানালা দিয়েই লিয়াম দেখেছেন একজন তরুণ অ্যাম্বুলেন্সের দিকে ছুটে যাচ্ছেন ও ভেতরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন।
বিবিসি রেডিও ফাইভকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লিয়াম বলেন “ছুরিকাহত এক ব্যক্তিকে হতচকিত অবস্থায় রাস্তায় ঘুরতে দেখেছেন” তিনি।
“সে অ্যাম্বুলেন্সের দরজায় নক করছিল এবং বলছিল সাহায্য করো, আমায় দয়া করে সাহায্য করো। আমাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে”-বলেছেন লিয়াম।
বারো মার্কেটের ওই হামলায় লিয়ামের বন্ধুও আহত হয়েছে।

হামলার পর মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ

এদিকে ওই সময়েই সাদা রংয়ের ভ্যানটি যখন লন্ডন ব্রিজের পথচারীদের ওপর চালিয়ে দেয়া হলো তখন ওই ব্রিজের পাশেই ছিলেন এরিক।
“ভ্যানটি ডান দিকে উঠে যেতে লাগলো এবং ওদিকে যেসব পথচারীরা ছিল তারা দৌড়াতে লাগলো”।
এরিক দেখলেন, ভ্যানটি কিছুদূর যাবার পর তিনজন লোক বের হয়ে আসলো এবং যেসব পথচারীদের আঘাত দিয়ে গাড়িটি চালিয়ে আসলো তাদের দিকে ছুটে গেল।
তিনি ভেবেছিলেন ভ্যানে থাকা ব্যক্তিরা হয়তো দেখতে গেছেন পথচারীরা ঠিক আছে কিনা।
কিন্তু এরিক অবাক হয়ে দেখলেন “তারা রাস্তায় পড়ে থাকা পথচারীদের লাথি দেয়া শুরু করে, মারধোর করে এবং ছুরি বের করে আঘাত করে। এটা আসলেই প্রচন্ড উত্তেজনাপূর্ণ সময় ছিল”।
মেট্রোপলিটন পুলিশ এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহত হবার খবর নিশ্চিত করেছে এবং আহত ৪৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

যারা হামলার শিকার

এ হামলায় যে সাত জন নিহত হয়েছে তাদের পরিচয় এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা গুরুতর আহত, তাঁর মাথা, মুখ এবং পায়ে অনেক আঘাত রয়েছে। তবে তার জীবন বিপদমুক্ত রয়েছে।
হামলার সময় কেউ ব্রিজ থেকে পড়ে থাকতে পারে এ আশঙ্কায় পুলিশ নৌকা নিয়ে টেমস নদীতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
কেউ যদি বন্ধু বা স্বজনদের খোঁজ জানতে চান তাদের সাহায্যের জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘ক্যাজুয়ালিটি ব্যুরো’ চালু করেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের অফিসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে আহতদের মধ্যে দুজন ফরাসি নাগরিক রয়েছে এবং এদের একজনের আঘাত গুরুতর।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বলা হয়েছে, ‘লন্ডনে হামলায় দুজন অস্ট্রেলিয়ান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Print Friendly, PDF & Email