April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জমে উঠছে রাজশাহীর আমের বাজার

ডেস্ক: চলছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। আম ও লিচুসহ অন্যান্য ফলের ভরা মৌসুম। আর আমের মধ্যে স্বাদে অনন্য রাজশাহীর আম। জৈষ্ঠ্যের এমন বৈচিত্র্যময় দিনে জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজারগুলো। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এবার আমের ক্ষতি হলেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা।


রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে। এ বাজারের আশপাশের সড়কগুলোতে এখন শুধুই চোখে পড়ছে আমভর্তি ভ্যান। বাগানের কাঁচা-পাকা আম নিয়ে সব ভ্যানের গন্তব্য বানেশ্বর বাজার।
সপ্তাহের সাতদিনই এখন ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাজারটি। রোজার মধ্যেও বিকিকিনিতে ব্যস্ত সবাই। হিমসাগর, গোপালভোগসহ নানা জাতের আম এই বাজার থেকেই রওনা দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
বানেশ্বর বাজারের আশপাশে রয়েছে অন্তত ৫০টি আমের আড়ৎ। বেশ কয়েকটি আড়ৎ ঘুরে দেখা গেল, সবগুলোই ভরে উঠেছে গায়ে আঠা লেগে থাকা টাটকা আমে।
এ আড়তে যেসব আম আছে, তার সবই গাছপাকা। কিন্তু দূর-দূরান্তে পাঠানোর জন্য একটু শক্ত থাকতেই গাছ থেকে নামানো হয়েছে।


রমজানের কারণে দেশের সব জায়গায় এখন আমের ব্যাপক চাহিদা। তাই হাটে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই আম শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহীর অনেক মানুষও আম কিনে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
বানেশ্বর হাটের মতো রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান ও সাহেববাজারসহ আমের অন্যান্য বাজারগুলোও জমজমাট হয়ে উঠেছে। এবার গাছভর্তি মুকুল স্বপ্ন দেখিয়েছিল রাজশাহীর চাষিদের। ব্যাপক ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে কিছু সময় তারা হতাশও হয়ে পড়েছিলেন চাষিরা। তবে এখন আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলেই জানিয়েছেন চাষিরা। তাছাড়া আমের দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। এতে আমে এবারও লাভের মুখ দেখার আশা করছেন চাষিরা।
আম ব্যবসায়ীরা জানান, গোপালভোগ এক হাজার ৯০০ টাকা, খিরসাপাত এক হাজার ৮০০, লখনা এক হাজার ৩০০, গুটি এক হাজার, হিমসাগর দুই হাজার এবং রানীভোগ এক হাজার ৭৫০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আর অন্য কোনো জাতের আম এখনও ওঠেনি। তাই আমের এ দাম আরও অন্তত সপ্তাহখানেক স্থায়ী থাকবে বলে জানান তারা। এমন দাম পেলে চাষিরা লাভবান হবেন বলেও ব্যবসায়ীরা জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, জেলায় আমের বাগান রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার আম এসেছে এক লাখ ২৬ হাজার ৪৮০ গাছে। এসব গাছ থেকে দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন।
এবার কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও আমচাষিদের সমন্বয়ে আম নামানোর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ১৫ মে থেকে গোপালভোগ ও গুটি, ২৫ মে থেকে হিমসাগর ও লখনা জাতের আম নামানো শুরু হয়েছে। আগামি ৮ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১০ জুন থেকে ফজলি, ২০ জুন থেকে আম্রপালি এবং ১৫ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম নামাতে পারবেন চাষিরা।
গত বছর থেকে রাজশাহীর আম বিদেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে। ওই বছর মাত্র ৩০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হয়। তবে এবার চীন ও ইউরোপে ১০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির টার্গেট নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। উন্নতমানের আম রপ্তানি করতে বেশকিছু বাগানে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি।

Print Friendly, PDF & Email