April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

চট্টগ্রামে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টিই অচল

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের মোট ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রের সংখ্যা ৬টি। সরকারি এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিদিন উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৬০ মেগাওয়াট। গ্যাস সংকট, পানির স্বল্পতা, ফার্নেস তেল সরবরাহ করতে সমস্যার অজুহাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র ৩২ শতাংশ। আর বেসরকারী মালিকানাধীন ৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৩৬৩ মেগাওয়াট। সে হিসেবে বেসরকারিভাবেই উৎপাদন হচ্ছে ৮২ শতাংশ বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পুরনো হয়ে যাওয়ায় সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সক্ষমতার শতভাগ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। মূলত কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫ ইউনিটে বছরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। তবে বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অধিকাংশ সময় এ কেন্দ্রগুলোতে ৫০ শতাংশেরও কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এখন পানি সংকটের কারনে উৎপাদন বন্ধ আছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪০ মেগাওয়াটের ইউনিট-২ ও ৫০ মেগাওয়াটের ইউনিট-৫। আর গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ আছে ২১০ মেগাওয়াটের চট্টগ্রাম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট।
গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন গত ১০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বেসরকারী ৭ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে গ্যাসভিত্তিক ২২ দশমিক ৫ মেগাওয়াটের রিজেন্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ।
গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ার বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আয়ুব খান চৌধুরী বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানায় (সিইউএফএল) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে চাহিদা থাকার সত্ত্বেও গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সিইউএফএল যদি গ্যাস নেওয়া বন্ধ রাখে তাহলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা যাবে।
চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২৩ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারী মালিকানাধীন ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১০ দিনে উৎপাদন হওয়ার কথা ১০ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সরকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদন করতে পেরেছে ৩ হাজার ৪৩৯ মেগাওয়াট। একই ভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৭ বিদ্যুৎ কেন্দ্রর উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩ হাজার ৬৩০ মেগাওয়াট। বেসরকারিতে উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৯৯১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আনুপাতিক বিচারে বেসরকারীতে উৎপাদন ৮২ শতাংশ। আর সরকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদন করেছে ৩২ শতাংশ বিদ্যুৎ।
চট্টগ্রামের কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫ ইউনিটে উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ২৩০ মেগাওয়াট। ১০ দিন হিসেবে ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এখন ২ ইউনিট বন্ধ থাকার পর গত ১০ দিনে সরকারী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন করতে পেরেছে ১ হাজার ২২ মেগাওয়াট। গ্যাস ভিত্তিক চট্টগ্রাম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিদিনের সক্ষমতা ৪২০ মেগাওয়াট। ১০ দিন হিসেবে ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিনের উৎপাদন ক্ষমতা ৪২০ মেগাওয়াট। অথচ গত ১০ দিনে এখানে উৎপাদনের পরিমাণ ৪৭০ মেগাওয়াট।
গ্যাস ভিত্তিক আরেক সরকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহায় দ্বৈত জ্বালানির ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্তমানে ফার্নেস তেল দিয়ে চলছে। গত ১০ দিনে ৪৯৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পেরেছে। সরকারী মালিকাধীন ফার্নেস তেল ভিত্তিক ২০০ মেগাওয়াটের হাটহাজারী ও দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১০ দিনে উৎপাদন করেছে ১ হাজার ৪৫২ মেগাওয়াট। এই ২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও ফার্নেস তেলবাহী ওয়াগন ট্যাংকার সংকট দেখা দিয়েছে। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে এই ২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পযার্প্ত উৎপাদন দিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পিডিবির কর্মকর্তারা।
সরকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন রয়েছে সিংহভাগ। ফার্নেস তেল ভিত্তিক ৫টি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১০ দিনে উৎপাদন করেছে ২ হাজার ৭৬১ মেগাওয়াট। এ সময়ে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন করার কথা ৩ হাজার ৪১৩ মেগাওয়াট। ৫টির মধ্যে শিকলবাহা রেন্টাল ৪৩৫ দশমিক ৬ মেগাওয়াট, আরপিসিএল ২৪৪ দশমিক ৪ মেগাওয়াট, জুলদা পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৮৭৫ মেগাওয়াট, বারাকা পতেঙ্গা ২৮২ দশমিক ১ মেগাওয়াট আর এনার্জি প্যাক উৎপাদন করেছে ৯২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এছাড়া গ্যাস ভিত্তিক ৭২ মেগাওয়াটের দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ দিনের উৎপাদনে ২৩০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ইউনাইটেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু থাকলেও গ্যাসের অভাবে রিজেন্ট বন্ধ আছে।
এখন নিয়মিত উৎপাদন করছে ফার্নেস তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে ফার্নেস তেলের মাধ্যমে। ফার্নেস তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে গড়ে প্রতি ইউনিট খরচ পড়ে ১৪ টাকা। পানির মাধ্যমে উৎপাদন করলে খরচ পড়ে প্রতি ইউনিট ৩০ পয়সা, গ্যাস দিয়ে তা হয় ৬৬ পয়সা আর কয়লাতে খরচ পড়ে ৫ টাকা।
পিডিবির (চট্টগ্রাম) প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন জানান, চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুতের সিংহভাগই আসত গ্যাস থেকে। এখন গ্যাসের সংকটের কারণে গ্যাস নির্ভরতা থেকে সরে আসতে হচ্ছে। দিন দিন গ্যাসের সংকট প্রকট আকার দেখা দিচ্ছে। যার ফলে ফার্নেস তেল দিয়ে উৎপাদন করতে হচ্ছে।
ফার্নেস তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাম বেশি হলেও বিদ্যুতের সংকট সমাধান করতে ফার্নেস তেলের বিকল্প নেই বলেও জানালেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email