April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জাতিসংঘ সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

ডেস্ক: জাতিসংঘ সদর দফতরে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রথমবারের মতো এ দিবসটি উদযাপন করা হয়।
নিউইয়র্ক থেকে প্রাপ্ত জাতিসংঘের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ, হাঙ্গেরি, মারিসাস, পেরু ও ভানুয়াতু স্থায়ী মিশনের এবং জাতিসংঘ সদর দফতর, নিউইয়র্কস্থ ইউনেস্কো অফিস ও নিউইয়র্ক সিটি’র মেয়র অফিসের যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় সময় সন্ধ্যে সাড়ে ৬টার দিকে জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা পৃথিবীর প্রতিটি ভাষার সংরক্ষণ ও সুরক্ষা, বহুভাষিক শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়া এবং ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বাহন হিসেবে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীর অংশবিশেষ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তিনি অরো বলেন, ‘বিশ্বের সকল ভাষা সংক্রান্ত গবেষণা এবং ভাষা সংরক্ষণের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি’।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাজপথে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির বেদনাদায়ক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, এটি পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য শহীদ হওয়ার একমাত্র বিরল ঘটনা।
হাঙ্গেরির স্থায়ী প্রতিনিধি কাতালিন এ্যানামারিয়া বোগায়া বলেন, “মাতৃভাষা সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে সংরক্ষণ করতে পারি। মাতৃভাষা শিক্ষা, অভিব্যক্তির প্রকাশ এবং পারস্পরিক আদান প্রদানের জন্য অপরিহার্য”। তিনি জানান হাঙ্গেরিতে ১৩টি ভাষা রয়েছে। তারা এই ভাষাগুলোকে সংরক্ষণের জন্য কাজ করছেন।
মারিসাসের স্থায়ী প্রতিনিধি জগদিস ধর্মচান্দ কজুল বলেন, “মাতৃভাষা সংহতি ও সহিষ্ণুতা শিক্ষা দেয়। এই দিবস উদ্্যাপনের মাধ্যমে আমরা যেন আমাদের বৈচিত্র্যের একতাকেই উদ্্যাপন করছি”। তিনি মহান ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা ব্যক্ত করেন।
পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি গোসটাভো মেজা কোয়াদ্রা বলেন, “মাতৃভাষা সংরক্ষণ হচ্ছে কোন দেশের শিকড়কে সংরক্ষণ করা। সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা- যার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব”।
ভানুয়াতুর স্থায়ী প্রতিনিধি ওডো ট্যাভি বলেন, “সফল গণতন্ত্রের জন্য ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বহুভাষাবাদ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা প্রাজ্ঞ ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণ করতে পারি”।
জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক ইনফরমেশনের প্রধান ক্রিস্টিনা গ্যালাক বলেন, “পারস্পরিক সম্পর্ক, শ্রদ্ধা, সহিষ্ণুতা ও সংলাপ বৃদ্ধিতে জাতিসংঘ বহুভাষাবাদের প্রচারকে আরও ত্বরান্বিত করছে”। তিনি বলেন, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা ৫০০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ইউএন রেডিও ৬০টি ভাষায় জাতিসংঘের কর্মকান্ড সারা বিশ্বে তুলে ধরছে।
জেনারেল এসেম্বিলী, কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট এবং ওয়াইড কো-অর্ডিনেটর ফর মাল্টিলিঙ্গুয়ালিজম বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিজ ক্যাথরিন পোলার্ড মাতৃভাষার উন্নয়নে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বছর জুড়ে নিরলসভাবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি মাতৃভাষাকে স্ব স্ব সংস্কৃতির হৃদয় বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানটিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি পিটার থমসন, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ও নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের বাণী পড়ে শোনানো হয়।
বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পর্বের সূচনায় যুক্তরাষ্ট্রের শ্রী চিন্ময় গ্রুপ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ নিয়ে মনোমুগ্ধকর থিম সঙ্গীত এবং শ্রী চিন্ময় এর ইংরেজি ভাষায় রচিত একটি কবিতা বিভিন্ন ভাষায় আবৃত্তি করেন।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্কুলের শিক্ষার্থীগণ, ইউএন লার্নিং সেন্টার ফর মাল্টিলিংগুয়ালিজম এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের শিক্ষকগণ, জাতিসংঘের জেনারেল এসেম্বলি ও কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে কর্মরত ভাষা কর্মীগণ গান, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত সদস্য দেশগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধিগণ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালি ও মিডিয়া প্রতিনিধিগণ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাসস

Print Friendly, PDF & Email