April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

দৃষ্টি এখন সার্চ কমিটি ও রাষ্ট্রপতির দিকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: এই মুহূর্তে দেশবাসীর চোখ সার্চ কমিটি ও রাষ্ট্রপতির দিকে গেঁথে আছে। বিষয়টি নিয়ে দেশের অন্যতম দল বিএনপি নাখোশ হলেও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিবেশ তেতে ওঠেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে কারা আসছেন, সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার চ্যালেঞ্জ।

এটা ঠিক যে, ইসি নিয়ে অনাস্থার জায়গায় একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল সকল দলের সাথে রাষ্ট্রপতির সংলাপে। সার্চ কমিটি গঠন, সার্চ কমিটির ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ তৎপরতা যেমন সুশীল সমাজের সাথে বৈঠক, তাদের মতামত গ্রহণ রাজনীতি ও নির্বাচনী আবহে খানিকটা বেশি আশার সঞ্চার করে। যদিও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সার্চ কমিটি নিয়ে আশাব্যঞ্জক কথা বলেনি। তবুও ঘটনাক্রমগুলো এগিয়েছে ইতিবাচকভাবে। সব রাজনৈতিক দলের নাম দেয়া, সুশীল সমাজের প্রস্তাব থেকে নাম নেয়া, সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি, সার্চ কমিটির নিজেদের মধ্যে বৈঠক এবং শেষতক রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত পৌঁছার প্রস্তুতি।

কে হচ্ছেন সিইসি, কেমন হচ্ছে ইসি- এ নিয়ে পুরো প্রক্রিয়ায় বড় আশার জায়গা তৈরিতে সার্চ কমিটির ওপর যেমন প্রত্যাশা আছে তেমনি রাষ্ট্রপতির ওপরও। আশাবাদী ও আস্থাশীল হতে চাওয়া জনগণ এবং হতাশার জায়গা থেকে সরতে চাওয়া বিএনপি তাই এখন যুগপৎ চেয়ে আছে সার্চ কমিটি ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির দিকে। এটা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

তবে সার্চ কমিটি নিয়ে হতাশা থাকলেও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ‘শক্তিশালী’ নির্বাচন কমিশন আশা করছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে মো. আবদুল হামিদ গ্রহণযোগ্য একটি ইসি গঠন করবেন। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বলছে, কী হবে? ওই যা ঠিক করে রেখেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেটাই হবে।’ আমরাও দেখতে চাই আসলে উনি (রাষ্ট্রপতি) জনগণের আশা-আকাঙক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারছেন কি না। আমরা আশা করব, এই দীর্ঘ-অভিজ্ঞ রাজনীতিক, যিনি (রাষ্ট্রপতি) আজকে যে জায়গায় আছেন, তিনি এই জাতিকে এই সঙ্কট থেকে মুক্ত করতে পারেন। তিনি একটি নির্বাচন কমিশন দেবেন, যে কমিশন অন্তত শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি না পারেন ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়ে তাদের নাম লিখিত হবে এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে তারা ব্যর্থ হবেন। আর যদি পারেন ইতিহাসে সবচাইতে স্বর্ণখচিত জায়গায় নাম লেখা থাকবে।

জাগপার এই আলোচনা অনুষ্ঠানে ফখরুল এই দলটিসহ ২০ দলের ১৩টি দলকে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমন্ত্রণ না জানানোর সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি (রাষ্ট্রপতি) শপথ নিয়েছেন, আপনি রাগ-অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না। আপনি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা এখন নন। আপনি সমগ্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। আমরা আশা করব, আপনি পরবর্তী সময়ে এই বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং সকল রাজনৈতিক দলকে যারা নিবন্ধিত, তাদের সকলকে আপনি আহবান জানাবেন, তাদের মতামত গ্রহন করবেন।’

সার্চ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নাম প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, চলমান রাজনৈতিক ‘সঙ্কটের’ অবসানে সরকারও এভাবে এগিয়ে আসবে তাই তারা চান।

ওদিকে বিবিসির এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে বিএনপি জোটের বয়কটের কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের দাবি এবং নির্বাচন ঠেকাতে ওই সময় বিএনপির আন্দোলনে দেখা গেছে ব্যাপক সহিংসতা। ভোটের পরে আবারো আন্দোলন করলেও বিএনপি সরকারকে নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারেনি বরং আন্দোলনে সহিংসতার কারণে সমালোচিত হয়েছে। আর নির্বাচন বয়কটের ফলে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাতো বটেই এমনকি সংসদে বিরোধী দলের স্থানেও এখন নেই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে বিএনপি জোটকে অনেকটাই কোণঠাসা দেখা যায়। বিএনপির প্রতিষ্ঠার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় এখন ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। বর্তমান রাজনীতিক পরিস্থিতির কারণেই আগামী নির্বাচন এবং নতুন কমিশন বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দিয়েছে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দাবি করেন সরকার তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করছে। তিনি বলেন ‘আমরাতো হরতাল অবরোধ কিছুই করতে পারি না। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা রয়েছে।’

বিএনপির নির্দলীয় সরকারের দাবি যে সরকার মানবে না সেটি বার বারই সরকারি দল বলে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে বোঝা যায় দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করতে চায় তারা। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন ‘এবারতো বিএনপির নির্বাচন না করার কোনো উপায় নাই। নির্বাচন তাদের করতেই হবে। আর যদি নির্বাচন না করে তাহলে আমরা জানি না বিএনপির ভবিষ্যৎ কী হবে?’

 

তোফায়েল আহমেদের মতে আগামী নির্বাচনে ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া নতুন কমিশন। অন্যদিকে শুরুতে সার্চ কমিটির সদস্যদের নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল বিএনপি।

নজরুল ইসলাম খান বলেছেন ‘সত্যি সত্যি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যাদের প্রতিনিধি বানাতে চায় তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণ যদি সে সুযোগটা পায় তাহলে আমাদের সুযোগ আছে ক্ষমতায় আসার। সে কারণে আমাদের কাছে এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ যে নির্বাচন কমিশনটা যেন অনুগত না হয়, সরকারের ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ার না হয়। যদি সেটাই হয় তাহলে জনগণের যত সমর্থনই থাকুক না কেন আমরা বিজয়ী হতে পারবো না।’

সংসদে বিরোধীদল না হলেও বিএনপি জোটই মূলত বাংলাদেশে রাজনীতিক বিরোধী শক্তি। তাই আগামী নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের গ্রহযোগ্যতার বিচারে বিএনপির রাজনীতি ও সিদ্ধান্তের দিকে বিশেষ দৃষ্টি থাকবে সবার।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবু হেনা ও এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দক্ষ নির্বাচন কমিশন যেমন দরকার, তেমনি রাজনৈতিক দল ও সরকারের সহযোগিতা এবং প্রার্থী ও ভোটারদের সহিষ্ণুতা জরুরি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন করে প্রশংসিত হলেও দলীয় সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচন করতে চাপে পড়তে হওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। সাবেক এই তিন সিইসির মধ্যে একজন বলেছেন, কারা ইসিতে নিয়োগ পেল, তার চেয়েও বড় বিষয় হল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ করা।

Print Friendly, PDF & Email