May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

‘১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ হারিয়ে যাওয়া আমার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা মামা-“শহীদ কবীর উদ্দিন আহমেদ” স্মরণে’

কাজী দ্রাকসিন্দা জবীন : শহীদ কবীর উদ্দিন আহমেদ আমার মামা। আমি তাকে দেখিনি। না দেখলেও তার প্রতি একটা নষ্টালজিয়া কাজ করে। দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গকারী এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরম পত্র পাঠক এম আর আখতার মুকুল সম্পাদিত বিজয়’৭১ ফল অব ঢাকা বইটি পড়ে তার সম্পর্কে যদ্দূর জেনেছি তা হচ্ছে ১৯৫২ সালে তার জন্ম। তার পিতা ডাঃ রকিব উদ্দিন আহমেদ, ৪ ভাই, ৩ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়, গ্রামের বাড়ী দিলালপুর, মুরাদনগর, কুমিল্লা। জগন্নাথ কলেজে বিএসসি পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের মতিয়া গ্রুপের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুজিবনগর সরকারে অধীন ২নং সেক্টরে মেজর হায়দারের অধীনস্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোফাজ্জল হোসেন চেীধুরী মায়া বীর বিক্রম-এর অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। যুদ্ধে তিনি ঢাকার বিভিন্ন গেরিলা অপারেশনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি গুলবাগ পাওয়ার হাউস (বিদ্যুৎ কেন্দ্র), ত্রিমোহনী (গোড়ান) অপারেশনে অংশ নেন। সেই সময়ে তার সহযোদ্ধা হিসেবে ছিলেন শহীদ বাকী, শহীদ বাবু, মুক্তিযোদ্ধা কামাল প্রমূখ। যুদ্ধ অবস্থায়ই অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ অপারেশনে যাওয়া প্রস্তুতি- পরিকল্পনাকালীন সময়ে, তৎকালীন মন্ত্রী সালাম খান (১৯৬৯ এর আগরতলা সড়যন্ত্র মামলার অন্যতম এডভোকেট) এর পুরানা পল্টনের বাসার গ্যারেজে ১০/১২ জন সহযোদ্ধাসহ ১৯৭১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সারাম খানের পুত্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবুও গ্রেপ্তার হন । তারা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। বন্দী অবস্থায় তাদরকে আগারগাঁওয়ে নিয়ে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায় পাক বাহিনী। বন্দী আবস্থায় মামা তার বাবাকে একটি পত্র লেখেন, যা এখানে হুবহু উল্লেখ করা হল-
“আব্বাজান,
প্রথমে আমার সালাম জানাইব। আশা করি খোদার ফজলে ভালোই আছেন। কামালের সঙ্গে আমার দেখা হইয়াছে। তাহার বাসা হইতে যেন কাপড় চোপড় পাঠাইয়া দেয়। আব্বা, আপনি বাবুর আব্বা সালাম খান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখিাবেন। আর সুলতান দাদাকে দিয়া নূরুল আমিন সাহেবকে ধরেন। আপনারা আমার জন্য কোন রকম চিন্তা করিবেন না। এখন পর্যন্ত আপনাদের কোন সংবাদ না পাইয়া চিন্তিত আছি। যদি পারেন আমার সঙ্গে দেখা করিতে পারেন। আমার জন্য কাউকে টাকা দিবেন না। যদি পারেন নিজেরা কিনে জেল গেটে জমা দিয়া দিবেন। আপনি আম্মাকে সান্তনা দিয়া রাখিবেন। আম্মাকে আমার সালাম ও দোয়া করিতে বলিবেন। এরশাদ ভাই ও মামাদের আমার সালাম জানাইবেন ও দোয়া করিতে বলিবেন।
ইতি, কবির।” (পত্রটি প্রথমা প্রকাশন ‘একাত্তরের চিঠি’ বইটিতে ১১৯ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছে।)
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কবিরউদ্দিন আহমেদকে অনেক চেষ্টা ও তদবির করে ১৬ নভেম্বর মুক্ত করে আনা হয়। এরপর তিনি আবার মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়েন এবং ঢাকার বিভিন্ন গেরিলা অপারশনে অংশগ্রহন করেন এবং বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল বেলা বিজয়ী বেশে বাড়ী ফিরে এলেও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চেীধুরীর নিখোঁজ সংবাদ পাওয়া মাত্রই, তাকে খুঁজতে তিনি এবং মুক্তিযোদ্ধা বাবু বেরিয়ে পড়েন। উল্লেখ্য, শহীদ ডাঃ আলীম চেীধুরী পরিবাবের সঙ্গে আমাদের পরিবারের নিবির সম্পর্ক ছিল। তিনি খুব সম্ভবত মোহাম্মদপুর মিরপুরে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। তাঁর ও সহযোদ্ধা বাবুর লাশ ও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের আতœাদান যাতে সার্থক হয় বিজয়ের এ মাসে সকলের কাছে এটাই প্রত্যাশা। আসলে এই হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত মূল্যায়ন কি এদেশে কোনোদিন হবে। জাতির কাছে এটাই আমার প্রশ্ন।

লেখক:  শহীদ কবীর উদ্দিন আহমেদ এর ভাগ্নি।

Print Friendly, PDF & Email