April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ ভারতীয় সেনা নিহত

ডেস্ক : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দফতরে হামলায় ১৭ সেনা সদস্য ও ৪ হামলাকারী নিহত হয়েছে। রবিবার ভোরে অস্ত্রধারী চার ব্যক্তি উরিতে লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে এ সামরিক স্থাপনায় হামলায় চালায়। ভোর ৪টার দিকে হামলাকারীরা প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে। এখন পর্যন্ত এ হামলার দায় কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। বার্তা সংস্থা এনআইএ-এর বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।

সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে ১৭ জওয়ান ও চার হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আহত সেনা সদস্যের সংখ্যা ৩৫ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারে চিরুনি অভিযান অব্যাহত আছে। এ জন্য ভারতের সবগুলো বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের এক বিবৃতিতে হতাহতের কারণ হিসেবে অগ্নিকাণ্ডের কথা বলা হয়েছে। সেনা সদস্যের থাকার জন্য অস্থায়ী তাবুতে আগুন ধরে গেলে এ ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের ধারণা, হামলাকারীরা ফিদায়েন বা আত্মঘাতী বন্দুকধারীরা হতে পারে। সেনা স্থাপনাটি  বারামুল্লা জেলার শ্রীনগর-মুজাফফরাবাদ হাইওয়ের উরিতে অবস্থিত। এটা সেনাদের অস্ত্রাঘার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এর আগে হামলায় অন্তত ২০ জওয়ান আহত হয়েছেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। তাদের হেলিকপ্টারে করে রাজধানী শ্রীনগরে সেনা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হামলার পর উরির দোকানপাট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরো শহরে যান চলাচল বন্ধ আছে।

হামলার প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর ও ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল দলবির সিং কাশ্মির সফরে যাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
হামলার পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সফর স্থগিত করেছেন। আজকেই তার রওনা দেওয়ার কথা ছিল। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জরুরি একটি বৈঠকও ডেকেছেন তিনি। উচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠকটি দুপুর সোয়া ১২টায় রাজনাথ সিংয়ের বাসায় অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে হামলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অবহিত করেছেন তিনি।

হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিরোধী দল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি জওয়ান নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশও করেছেন।

এর আগে চলতি বছর পাঞ্জাবে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেখানে টানা তিনদিন বন্দুকযুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হন।

উল্লেখ্য, প্রায় তিন মাস ধরে কাশ্মিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সর্বশেষ পুলিশের ছররা গুলিতে আহত ১৫ বছরের কিশোর মোমিন আলতাফকে শুক্রবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার তার মৃত্যুর পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শ্রীনগরের হারওয়ানের বাসিন্দারা।  তার জানাজা শেষে মানুষ হারওয়ানের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের ফলে হারওয়ানে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জারি করা হয় কারফিউ। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। এই বিক্ষোভের আঁচ যাতে অন্য এলাকায় ছড়িয় পড়তে না পারে তার জন্য শ্রীনগরের বেশ কিছু উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গত তিন মাসে ও কিশোরের মৃত্যুর পর বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ জনে।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ধরনের সহিংসতা ও বিক্ষোভ চলছে কাশ্মিরে। এ ব্যাপক বিক্ষোভের শুরু হয় কমান্ডার বুরহান ওয়ানিসহ তিন হিজবুল যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর। ৮ জুলাই কাশ্মিরের অনন্তনাগের কোকেরনাগ এলাকায় সেনা ও পুলিশের বিশেষ বাহিনীর যৌথ অভিযানে তারা নিহত হন। এর পর কাশ্মিরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ কাশ্মিরিদের দাবি, বুরহানকে ‘ভুয়া এনকাউন্টারে’ হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে পুলওয়ামা ও শ্রীনগরের কিছু অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়। পরবর্তীতে বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে গেলে কাশ্মিরের দশটি জেলা, এমনকি দূরবর্তী গ্রামেও কারফিউ জারি করা হয়। বিক্ষোভ দেখিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ। আর বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা জারি রাখে নিরাপত্তা বাহিনী। আর তাতে প্রাণ হারায় অন্তত ৬৭ জন। টানা ৫২ দিন পর ২৯ আগস্ট শ্রীনগরের কয়েকটি এলাকা থেকে কারফিউ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও ১৪৪ ধারা জারি থাকে।  সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, রয়টার্স।

Print Friendly, PDF & Email