April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

অর্ধশতাব্দী ধরে ভাগ্য জানতে যে বই হাতড়াচ্ছে ভারতবাসী

ডেস্ক : লাল মলাটের বইটির নামটি ভারি সরল। আঁতেলেকচুয়াল বাঙালি অনেক সময়েই সত্তর দশকের বিখ্যাত ‘রেড বুক’ বলেও ভেবে বসতেই পারেন, তাতে ‘লাল কিতাব’-এর কিছু এসে যায় না। গত অর্ধশতাব্দী ধরে অগণিত ভারতবাসীকে ‘ভাগ্য জানিয়ে’ আসছে এই বই। জানিয়ে আসছে আরও রহস্যময় বহু কিছুই। আজ, এই অনলাইনের যুগেও ‘লাল কিতাব’-এর বিক্রি তুলকালাম। সত্যি বলতে, ‘লাল কিতাব’ এমনই এক গ্রন্থ, যার লেখক থেকে শুরু করে বিষয়-আশয়— সবটাই রহস্যে মোড়া।

এখানে কিছু তথ্য রইল ‘লাল কিতাব’ সম্পর্কে।

• ‘লাল কিতাব’ উর্দু ভাষায় লেখা বই। এর বিষয় সামুদ্রিক জ্যোতিষ।

• পুরো বইটিই পদ্যে রচিত এবং অনেক ক্ষেত্রে এতটাই প্রতীকী যে, এর অর্থোদ্ধার কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

• অনিমান করা হয়, প্রাচীন পারসিক জ্যোতিষ চর্চার উত্তরাধিকার বহন করছে ‘লাল কিতাব’।

• লিখিত গ্রন্থ হলেও ‘লাল কিতাব’-এর লেখক যে ঠিক কে, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। অনুমান করা হয়, পণ্ডিত রূপচাঁদ যোশি পঞ্জাবে ১৯৩৯-১৯৫২ সাল নাগাদ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন।

• আশ্চর্যজনকভাবে ১৯৮০-র দশকে ‘লাল কিতাব’-এর জনপ্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যায়। বইটি নিয়ে উত্তর ভারতে হইচই শুরু হয়। তবে এ কথাও ঠিক, ‘লাল কিতাব’-এর বিষয়বস্তু বা তাতে উল্লিখিত কহাবতগুলির বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানায় চলিত ছিল। গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল এই সব কহন। সেদিক থেকে দেখলে বাংলার খনা বা ডাকের বচনের সঙ্গে মিল রয়েছে এই সব প্রফেসির।

• অনেকেই বিশ্বাস করেন, ‘লাল কিতাব’ কেবলমাত্র মানুষের ভাগ্যই জানায় না, তার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের আত্মার উন্নতিও ঘটায়। গ্রহ-তারকায় ভার মহাবিশ্বের সঙ্গে কুণ্ডলিনীশক্তির যোগ ঘটায়।

• গ্রহবৈগুণ্য কাটাতে নানা রকমের হোম-যজ্ঞের পরামর্শ দেয় ‘লাল কিতাব’। এ থেকে অনেকে মনে করেন, বৈদিক জ্যোতিষের সঙ্গেও এ্ই বইয়ের যোগ রয়েছে।

• বইটি যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন তার কোনও নাম ছিল না। লাল শালুর মলাটে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল কোনও আখ্যাপত্র ছাড়াই। সেই থেকেই এর নাম দাঁড়ায় ‘লাল কিতাব’।

• ‘লাল কিতাব’-এ হস্তরেখা, কোষ্ঠী, সামুদ্রিক গণনা— সবকিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভাগ্য বিড়ম্বনা রোধে রত্নের ব্যবহারবিধিও।

• এসবের পাশাপাশি আরও অনেক ক্রিয়ার কথাই ‘লাল কিতাব’-এ বলা হয়েছে, যাদের উৎস কখনওই কোনও জ্যোতিষ শাস্ত্র নয়। পড়লে বোঝা যায়, নদীতে পয়সা নিক্ষেপ, অবিবাহিতা মেয়েদের অন্নদান, গরুকে ঘাস খাওয়ানোর মতো ক্রিয়া উঠে এসেছে লোকাচারের গর্ভ থেকে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাস্তুশাস্ত্রের নিদানও।

• অনুমান করা হয়, ‘লাল কিতাব’-এর রচয়িতা এমন একটা গ্রন্থ সংকলন করতে চেয়েছিলেন, যাতে এই উপমহাদেশে চলিত বিবিধ জ্যোতিষকে জায়গা দেওয়া যায়। এরই ফল ‘লাল কিতাব’, যা আসলে ৫টি পৃথক পৃথক খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল।

ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে ‘লাল কিতাব’-এর জনপ্রিয়তা।

Print Friendly, PDF & Email