May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ফের বাড়ছে গ্যাসের দাম : মিলবে না নতুন সংযোগ

সাইফুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি : জ্বালানী হিসেবে বহুল ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ফের বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে সরাকর। বছর না পেরুতেই এমন ঘোষণা দিল সরকার। একই সঙ্গে নতুন করে বাসা-বাড়িতে আর কোন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন,  এখন থেকে বাসা-বাড়িতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে আবাসন খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অভিমত সাধারণ মানুষের। এ সমস্যা সমাধানে পাইপলাইনের গ্যাস ও এলপিজি গ্যাসের দামের মধ্যে সমন্বয় করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগ অনেকটা কমে আসবে বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে সঞ্চালন ও বিতরণ জনিত খরচ বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে এরই মধ্যে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে। গতকাল শুরু হওয়া গণশুনানির পর নির্ধারিত হবে গ্যাসের নতুন মূল্যহার। তবে বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এখন গ্যাসের মূল্য আরো বাড়ালে ক্ষতি হবে রপ্তানিমুখী শিল্পের; নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও। গৃহস্থ ঘরের হেঁসেল থেকে শুরু করে, পরিবহন, কলকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ দৈনন্দিন জীবনের জ্বালানি চাহিদার একটা বড় অংশেরই প্রাথমিক উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস।
মূল্য বৃদ্ধির বছর পার না হতেই আবারও গ্যাসের মূল্যহার পুননির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেশ ক’মাস আগে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের নতুন মূল্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে প্রস্তাব করা হয়। মূল্যহারে ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির দাবি করা হয়েছে। যাতে এক চুলার মূল্য দাঁড়াবে ১১০০ টাকা, দুই চুলা ১২০০ টাকা। বাড়বে মিটারযুক্ত আবাসিক গ্যাস ও সিএনজিসহ শিল্পখাতেও। তবে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী মহলের আশঙ্কা- বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা না করে এভাবে মূল্যবৃদ্ধিতে লোকসানের মুখে পড়বে রপ্তানিমুখী শিল্প।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাস সংকটে থাকা অবস্থায় তাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাতে তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এরপর সেই গ্যাসের দাম যদি আবার বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা তো ক্রস ফায়ারে মরে গেল। শিল্পখাতে গ্যাসের পরিবর্তে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিও উঠে আসে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে। তাদের মতে, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ শিল্পখাতে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ পরিস্থিতিও হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
তবে বাসা-বাড়ির রান্নার কাজে তুলনামূলক কম খরচে পাইপলাইনের গ্যাস সরবরাহ করা হলেও এবার দু:সংবাদ আসছে নতুন ভবনের অধিবাসীদের জন্য। এখন থেকে নতুন করে এখন আর কোনো ভবনে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিকল্প জ্বালানী হিসেবে এলপিজি গ্যাস সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। তবে বাসা-বাড়িতে নতুন করে গ্যাস দেয়া না হলে আবাসন খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি এর ফলে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলেই মনে করেন সাধারণ মানুষের।
এদিকে আবারও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকারী কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট সব মহলের অংশগ্রহণে এ নিয়ে গণশুনানি শুরু হয়েছে। ৮ দিনব্যাপী এ শুনানির প্রথম দিনে গ্যাস সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরে।
তাদের দাবি, মানসম্মত গ্যাস সরবরাহের জন্য নতুন করে গ্যাস সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ কারণে দাম বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এরপর পর্যায়ক্রমে ছয়টি বিতরণ কোম্পানি এবং গ্যাস নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও দাম বাড়ানোর বিষয়ে শুনানি হবে। শুনানিতে ভোক্তা পর্যায়ের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী মহলসহ অংশ নিয়েছে বিভিন্ন স্তরের বিশেষজ্ঞগণ। শুনানি শেষে বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের মধ্যে নতুন মূল্য হারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

Print Friendly, PDF & Email