May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

‘রূপমের উচিত তার দেশ নিয়ে নাক গলানো’

ডেস্ক : ‘ভারতীয় অন্যান্য শিল্পীদের মতো ফসিলসকেও আমি ঢাকায় স্বাগত জানাই। আমরা উদারতায় বিশ্বাসী। দুই-তিন বছর আগেও ও ঢাকায় একটা টিভি চ্যানেলে লাইভ শো করে। তখন তাকে আমি বাহবা দিয়েছি। আর এর বিনিময়ে আমি এই পেলাম? আমার দেশপ্রেমকে ‘ভারত বিরোধিতা’ ভেবে ভুল করবেন না। রূপমের উচিত কাশ্মির, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও ভারতের অন্যান্য সমস্যা কবলিত অঞ্চলগুলো নিয়ে ভাবা ও দেশপ্রেম দেখানো। শাফিন আহমেদ ফেসবুকে কী লিখল সেটা নিয়ে নাক গলিয়ে রূপম হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে।’

শুক্রবার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এই কথা বলেছেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান শাফিন আহমেদ। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সাক্ষাতকারটি।

কলকাতায় আজাদীর কনসার্টে আপনাদের পারফর্ম করার কথা ছিল ১৩ আগস্ট…
দিল্লির একটি ইভেন্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ কনসার্টের ব্যাপারে কথা হয়েছিল। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ওখানকার একটি ছোট্ট গ্রুপ ফসিলসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা মাইলসের বিরুদ্ধে কুপ্রচারণা চালাতে থাকে।

ফসিলসও তো সেখানে পারফর্ম করছে, তাই না?
আমিও তাই শুনেছি

এমনটি হওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?

আমার কোনো ধারনা নেই। এর আগেও ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে বহুবার মাইলস কনসার্ট করেছে। আমরা প্রথমে এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেইনি। মাইলসের মতো একটি ব্যান্ডকে নিয়ে নানা বিরুপ মন্তব্য দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। বাংলাদশে ও ভারতে দুই দেশেই আমাদের অনেক ফ্যান আছে। তাই আমরা উত্তর দিয়েছি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করার মাধ্যমে।

একটু খুলে বলবেন?
ইন্ডিয়ান শিল্পীরা প্রায়ই বাংলাদেশে আসছেন গান গাইতে। আমরা সব সময়ই তাদের স্বাগত জানাই। ফসিল ব্যান্ড আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে এমন ব্যবহার আমরা কারও সঙ্গে কখনই করিনি। সংগীত ভৌগলিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে রাখার জিনিস নয়। কয়েকবছর আগে ফসিলস বাংলাদেশের একটি টিভি অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিল। আমি তাদের স্বাগত জানিয়েছি।

সম্প্রতি আমাদের দেশে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ শিরোনামে সংগীতবিষয়ক একটি প্রজেক্ট শুরু হয়েছে। এখানে ইন্ডিয়া ও ইউরোপীয়ান কান্ট্রির শিল্পীরা পারফর্ম করছেন। বলা যেতে পারে এটি দেশি-বিদেশি শিল্পীদের জন্য সংগীতের একটি বড় প্লাটফর্ম।

উইন্ড অব চেঞ্জ-এ ভারতের নামকরা বেজিস্ট মোহিনী দে আমাদের সঙ্গে বাজিয়েছেন। আরও একজন হলেন উষা উথুপ। তারাও এই অনুষ্ঠানটির প্রশংসা করেছেন। আমি আরও একটি কথা বলতে চাই। ইন্ডিয়াতে মাইলসের একটা ভালো সুনাম আছে। দিল্লি গুজরাটের ভূমিকম্পের সময় মাইলস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভূমিকম্প কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে কলকাতে এসে কনসার্ট করেছে। বন্ধুত্বের কারণেই আমরা বার বার আমাদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। শান্তি ও বন্ধুত্বের জন্য আমরা গান গেয়েছি। এখন সেই বন্ধুত্বকে মিস করছি।

ঘটনার সূত্রপাত আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস। আপনি সেখানে ইন্ডিয়াকে ধর্ষনের শহর বলেছিলেন…
আমার ফেসবুক পেজে আমি কী লিখব না লিখব এটা আমার নিজের ব্যাপার। এই বিষয়ে আমি রূপম ইসলাম ও ফসিল ব্যান্ডকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না। একটা উদাহরণ দেই— ইসরাইল গাজায় বোমা হামলা করছে, শিশুদের হত্যা করছে প্রতিদিন এ ঘটনাতেও তো একজন মানুষ হিসেবে আমি ব্যাথা অনুভব করি। তাহলে কেন আমি সেটা নিয়ে লিখব না!

কোনো দেশকে অপমান করার জন্য এই স্ট্যাটাস না। এটা বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেওয়া। ভারতকে যে ‘ধর্ষণের রাজধানী’ বলা হয়, এই শিরোনামটি শাফিন আহমেদের দেওয়া নয়। ভারতকে ছোট করার জন্যও বলিনি। আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলে যে এই রকম ধর্ষণের ঘটনা ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও অহরহ ঘটে না।

সিরিয়াতে এখন কি হচ্ছে? নিরীহ সাধারণ মানুষকে কি মেরে ফেলা হচ্ছে না? তাহলে কেন আমি সেটা নিয়ে লিখব না। ‘বয়কট মাইলস’ ক্যাম্পেইনটাকে জোরদার করার জন্যই আমার মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে ব্যবহার করা হয়েছে।

এক স্টাটাসে হামিন আহমেদ লিখেছেন- ‘বাংলাদেশে সকল ইন্ডিয়ান আর্টিস্ট নিষিদ্ধ করা হোক’…
আসলে রূপম ও তার ব্যান্ড সদস্যরা যেটা করেছে তার সাথে অন্যকিছুর তুলনা হয় না। আমরা যে বিবৃতি দিয়েছি সেটা ভারতীয় মিউজিক কিংবা গায়কদের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের দেশের একজন স্থানীয় শিল্পী যে অংকের সম্মানী পান, একজন বহিরাগত শিল্পীকে তারচেয়ে ১০ কিংবা ২০ গুণ বেশি সন্মানি দেওয়া হয়। এমনকি এখানে একজন ভারতীয় ‍ও স্থানীয় শিল্পীর মূল্যায়নের বৈষম্যটাও চোখে পড়ার মতো। আপনি যদি একজন ভারতের শিল্পীকে ৩ কোটি টাকা দিতে পারেন তাহলে স্থানীয় একজন গুণগত মানের শিল্পীর সাখে মাত্র কয়েক হাজার টাকা নিয়ে দর কষাকষি করবেন কেন? এমনও দেখা গেছে, মাত্র কয়েক লাখ টাকা নিয়ে আমাদের সাথে অনেকেই দরকষাকষি করেছে। এভাবে একটা দেশের সংস্কৃতি বিকষিত হতে পারে না। ক্ষোভের জায়গাটা এখানেই। এটা নির্দিষ্ট কোনো ভারতীয় শিল্পীর বিরুদ্ধে নয়।

ফসিলসকে অভিযুক্ত করার পেছনে কোনো প্রমাণ আছে কী?
একটু ফিরে তাকাই। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমালোচিত ক্রিকেট ম্যাচটিতে এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যেগুলোর সবই প্রায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। একটা ছোট দেশ যদি কখনও কোনো পরাশক্তি দলের বিরুদ্ধে ভালো খেলে তাহলে ভক্তরা উত্তেজিত হবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়েই কিন্তু এক দল আরেক দলকে উত্যক্ত করে ফান ভিডিও বানিয়েছিল। আর তার প্রতিউত্তরে রূপম ইসলাম কি করলেন, ‘বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান বলে বসলেন।’ সে তখনই তার ইমেজটা নষ্ট করে ফেলেছে।

এরপরও কি রূপমকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে?
আমার ভিডিও বিবৃতির শেষের দিকে আমি বলেছি, ভারতীয় অন্যান্য শিল্পীদের মতো ফসিলসকেও আমি ঢাকায় স্বাগত জানাই। আমরা উদারতায় বিশ্বাসী। দুই তিন বছর আগেও ও ঢাকায় একটা টিভি চ্যানেলে লাইভ শো করে তখন তাকে আমি বাহবা দিয়েছি। আর এর বিনিময়ে আমি এই পেলাম। আমার দেশপ্রেমকে ‘ভারত বিরোধিতা’ ভেবে ভুল করবেন না। রূপমের উচিত কাশ্মির, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও ভারতের অন্যান্য সমস্যা কবলিত অঞ্চলগুলো নিয়ে ভাবা ও দেশপ্রেম দেখানো। শাফিন আহমেদ ফেসবুকে কি লিখল সেটা নিয়ে নাক গলিয়ে রূপম হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email