May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

দেশে প্রবাসীদের টাকা পাঠানো কমছে

বিশেষ প্রতিনিধি : বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের প্রধান যোগান প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমেছে। সদ্য বিদায় নেয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৯ কোটি ডলার (প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা) বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম।
একদিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানিতে স্থবিরতা, অন্যদিকে মার্কিন মুদ্রা ডলারের তুলনায় টাকার মান শক্তিশালী হওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ কম এসেছে। ফলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন; যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৯ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তিন যুগেরও বেশি সময়ে পর প্রথমবারের মতো ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ফের ধস নেমেছে প্রবাসী আয়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুনে ঈদের কেনাকাটার জন্য প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স বেশি পাঠিয়েছেন। ফলে জুনে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। জুন মাসে ১৪৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনে অনুযায়ী, গেল অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩৯ কোটি ডলারের রেমিটেন্স আসে। আগস্টে আসে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১৩৫ কোটি ডলার আসে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আসে যথাক্রমে ১১০ কোটি, ১১৪ কোটি ২৫ লাখ এবং ১৩১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এরপর জানুয়ারিতে এসেছিল ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১১৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার, মার্চে আসে ১২৮ কোটি ১১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স।
তারপর এপ্রিলে আসে ১১৯ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিটেন্স, মে মাসে আসে ১২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে এবং সর্বশেষ জুনে আসে ১৪৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স।
রেমিটেন্স আশানুরূপ হারে না বাড়লেও রফতানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি আগের বছরের তুলনায় বাড়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রিজার্ভের এ পরিমাণ দ্বিতীয়। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেশের ৮ মাসের বেশি আমদানি দায় মেটানো সম্ভব।
রেমিটেন্স কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে একমাত্র রিজার্ভ তথা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে রেমিটেন্স কমছে, এর মধ্যে অন্যতম ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের সুবিধা হলেও রেমিটেন্স ও রফতানিতে প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। অর্থাৎ আয় কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স পাঠানো কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের অনেকে জমি কেনা ও ব্যবসা করার জন্য রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু এখন জমি কিনতে রেজিস্ট্রেশনসহ নানা সমস্যার কারণে প্রবাসীদের আগ্রহ কমেছে। এছাড়াও দেশে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা, বিনিয়োগ মন্দা, বিদেশ থেকে শ্রমিক ফিরে আসা, হুন্ডির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন।

Print Friendly, PDF & Email