May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জঙ্গি রোহানের বাবা আ.লীগ নেতা বাবুল নিখোঁজ

স্টাফ রিপোর্টার : গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলাকারী নিহত জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজের বাবা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুল হঠাৎ করেই লাপাত্তা রয়েছেন। পুলিশ নজরদারিতে রাখলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলাতে পারেনি বলে জানিয়েছে সূত্র।
সূত্র জানায়, ছেলে রোহানের ঘটনা জানজানি হওয়ার পরপরই রোববার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন ইমতিয়াজ খান বাবুল। আজ সোমবার রাতেও বাড়িতে ফেরেনি তিনি। বাবুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে গতকাল থেকে। বাড়ির কেয়ারটেকার এবং নিরাপত্তারক্ষীরাও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারছে না। দলীয় লোকজনও কোনো খবর পাচ্ছে না বাবুলের।
প্রায় ৫ বছর আগে মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া বি-ব্লকের ৭/৯ নম্বরের বাড়িটি ভাড়া নেন বাবুল। ইমতিয়াজ খান বাবুল গত বছরের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন।
গুলশান ট্রাজেডির জানাজানির পর রোববার সকালেই রোহানের পরিবার বাড়ি থেকে বের হয় বলে জানান, বাড়িটির কেয়ারটেকার নুরু মিয়া।
নুরু মিয়া বলেন, তিনি (বাবুল) গতকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন। আজও আসেনি। অনেকেই খোঁজ নিতে আসছেন। কিন্তু আমি তার খবর জানি না। কি ঘটেছে, তাও ভালো করে জানি না।
রোহান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নুরু মিয়া বলেন, অনেক ভদ্র ছিল রোহান। কারো সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি। খারাপ ছেলেদের সঙ্গেও মিশত না। মসজিদে গিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। খুব চাপা স্বভাবের ছিল ছাওয়ালডা।
রোহান প্রায় বছরখানিক আগে বাড়ি থেকে উদাও হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছিলাম। কিন্তু বাবুল সাহেবের (রোহানের বাবা) সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনোদিন কথা হয় নাই। আমরা গরিব মানুষ। উপরতালার মানুষগো তো সব খবর রাখতে পারি না। চাইলেও তারা আমাগো সব কথা কইব না।’
একই বিষয়ে কথা হয় বাড়ির মালিক ক্যাপ্টেন ডা. (অব.)এএসএম আনিসুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়া হিসেবে একটি পরিবারের সঙ্গে যে ধরণের সম্পর্ক থাকার কথা আমাদের তাই ছিল।
রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাড়িতে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি কোথায় গেছেন, তা বলে যাননি।
বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী শাহজাহান আলী জানান, গতকাল দুপুরের আগেই ইমতিয়াজ সপরিবারে গাড়িতে করে বেরিয়ে গেছেন। আর ফেরেননি। বাসায় এখন কেউ নেই। কাউকে যেতেও নিষেধ করেছেন মালিক।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত ডিপুটি কমিশনার (এডিসি) ওয়াহেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, চিকিৎসার কথা বলে গতকাল বাড়ি থেকে বের হয়েছেন নিহত রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল। তিনি এখনও বাড়িতে ফেরেননি বলে জানতে পেরেছি। তবে বিশেষ নজরদারিতে রয়েছেন বাবুল সাহেব। আমরা সব সময় খোঁজ খবর রাখছি।
উল্লেখ্য, গুলশান হামলার পর সাইট ইন্টেলিজেন্স হামলাকারী হিসেবে যেসব জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে সেখান রোহানের নাম রয়েছে। তার পরিচিতজনরা  রোহান ইমতিয়াজের পরিবারের একটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে। রোহান ইমতিয়াজের ছবির সঙ্গে বেরিয়েও আসে তার পারিবারিক তথ্যও।
ইমতিয়াজ খান বাবুল নিজেও ছেলের সঙ্গে তার ছবি প্রকাশ করেছিলেন এ বছরের ২১ জুন, যেখানে তিনি গত বছরের একই দিনে পোস্ট করা এক ছবি প্রকাশ করে লিখেন, “বাবা তুমি কোথায়, প্লিজ ফিরে এসো”।
ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ফিবার রেফারি। রোহানের মা স্কলাসটিকা স্কুলের একজন শিক্ষিকা। মা-বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান রোহানের দুই বোন আছে।

Print Friendly, PDF & Email