May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সংকট মোকাবিলায় জাতীয় সংলাপ আহ্বান এরশাদের

সংসদ প্রতিবেদক : দেশের চলমান ‘সংকট’ নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
তিনি বলেন, ‘সুশাসন আজ প্রশ্নবিদ্ধ নয়; সুশাসন গুলিবিদ্ধ। আসুন এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলি। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, যেসব রাজনৈতিক দল সন্ত্রাস ও জ্বালাও পোড়াওকে বিশ্বাস করে না তাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করুন। কঠিন সমস্যা থেকে জাতিকে রক্ষার ব্যবস্থা করুন।’
দশম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে মঙ্গলবার (২৮ জুন) ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি করেন।
আর্থিক খাতের লুটপাটের প্রসঙ্গ টেনে এরশাদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ব্যাংকিং খাতে সাগর চুরি হয়েছে’’। কিন্তু এর জন্য দায়ী কে? চুরি বন্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? বাজেটে তার রূপরেখা দেওয়া হয়নি। আমরা এ সংসদে লুটপাট নিয়ে আলোচনা করি আর বাইরে দ্বিগুণ হারে এ লুটপাট চলতে থাকে। ব্যাংকের ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। জনগণের এ টাকা অবলোপনের অধিকার কে দিয়েছে?’
অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। এ টাকা ক্যাসিনোতে পাওয়া গেছে। আপনি বলতে চান এর সাথে আমাদের কেউ জড়িত নয়। ঘটনায় ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কেন এ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হচ্ছে না? কেন অপরাধীদের আড়াল করে রাখছেন? কেন ঘটনায় জড়িতদের বিচার করছেন না? আপনার কী ভয়? অন্যায় করে বেঁচে যাবে এটা তো হয় না। লুটপাট হবে কিন্তু প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা হবে না। এটা বিচারহীনতার লক্ষণ।’
বিদেশে টাকা পাচার প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এটা দিয়ে এবারের বাজেট দিয়েও এক লাখ কোটি টাকা ‍উদ্বৃত্ত থাকত। ঘাটতি বাজেট দিতে হতো না, নতুন করে ট্যাক্স ও ভ্যাট আরোপ করতে হতো না। এ টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। পানামা পেপারসে বাংলাদেশের ২৩৪ জনের নাম এসেছে। এরা কারা? এদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা বাজেটে উল্লেখ নেই। অর্থনীতি খাতে লক্ষ কোটি টাকা পাচার না হলে আমাদের প্রবৃদ্ধি বহু আগেই ৮/৯ শতাংশ অর্জন করতে পারতাম। জনগণের লুট ও পাচার হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য সরকার কোনো ব্যবস্থ‍া গ্রহণ করেনি। বাজেটেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। লুট ও ‍পাচারে জড়িতদের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন আমরা তা জানতে চাই। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে লুটপাটের অর্থ উদ্ধার করা হোক। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। সরকারের কাছে দাবি, এ লুটপাটের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম তনুর মা বলেছেন, ‘‘গরিব বলে কি আমরা বিচার পাব না।’’ ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে এক হাজার ৭১৫ জন নিহত হয়েছেন। গত মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ১৩ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে। এর দায়িত্ব কি সরকারকে নিতে হবে না। একটি গুপ্তহত্যার বিচার হয়েছে এমনকি নজির সরকার দেখাতে পারবে? যে সমাজে এসপির স্ত্রী নিরাপদ নয়; সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে? আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বহন করে চলেছি।’
প্রাদেশিক সরকারের দাবি করে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশে এখন ১৭ কোটি মানুষ। এত লোড আপনি নিতে পারবেন না। প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থ‍া চালু করলে আপনার এ গুরুভার কমে যাবে। এটা করলে মানুষ চিরকাল আপনাকে স্মরণ করবে। স্বর্ণাক্ষরে আপনার নাম লেখা থাকবে।’
জাতীয় পার্টি সব সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল উল্লেখ করে পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সাথে আপনাদের নীতি ও আদর্শের ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে আমরা এক ও অভিন্ন। আমি সব সময় আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে একসাথে নির্বাচন করেছিলাম। আমরা যুগপদ আন্দোলন করে অত্যাচারী বিএনপি সরকারকে সরিয়েছি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলে একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসার সুযোগ হয়। ২০০৬ সালে মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালে আপনাদের জন্য বিশাল বিজয় এনে দিয়েছি।’
জাতির পিতাকে সার্বজনীন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আমি সর্বপ্রথম জাতির জনকের কবর জিয়ারত করি। আমার এখনো ইচ্ছা হয়, জাতির জনকের কবর জিয়ারতের কিন্তু জাতির জনক তো আমাদের নয়; আওয়ামী লীগের? অনুরোধ করব, জাতির জনককে সার্বজনীন করুন।’

Print Friendly, PDF & Email