May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ইসি, বাঁশখালীর নির্বাচন স্থগিত

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরকারদলীয় স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে বাদী করে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৪ জুন অনুষ্ঠেয় বাঁশখালীর ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ এ তথ্য জানান।
এর আগে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সাংসদ ও তাঁর অনুসারীরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দাপ্তরিক কক্ষে এ কাণ্ড ঘটে। এ ব্যাপারে সাংসদ ও নির্বাচন কর্মকর্তা একে অপরকে দায়ী করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকালে ইউএনও কার্যালয়ে স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে ডেকে পাঠান। এরপর তিনি ইউএনওর দরজা বন্ধ করে প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন। ইউএনও শামসুজ্জামান তখন রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘এমপি (সাংসদ) সাহেব আমাকে ইউএনও সাহেবের কার্যালয়ে ডেকে পাঠালে আমি যাই। এরপর তিনি দরজা বন্ধ করে আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। এ সময় ভেতরে আমরা দুজনই ছিলাম। আমি চিৎকার করলে তিনি দরজা খুলে দেন। এরপর তাঁর অনুসারী আরও চারজন কক্ষে প্রবেশ করেন। তাঁরাও আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন।’
চড়াও হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি সাহেব বাঁশখালীতে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। আমি তাঁর চাপের মুখে বলি, স্যার জনগণ ভোট দিলে আপনার প্রার্থী জিতবে। আমি কীভাবে আপনার প্রার্থীকে জেতাব? এরপর আবার আমার ওপর চড়াও হন তিনি। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে মারতে থাকেন। থেমে থেমে এক ঘণ্টা ধরে আমাকে মারধর করেন তাঁরা। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। মারার সময় দু-তিনজন আমাকে ধরে রাখেন। বাকিরা আমাকে লাথি, কিল-ঘুষি মারেন। পুলিশ সদস্যও আমাকে চেপে ধরে রেখেছিলেন, যাতে কিল-ঘুষি খাই।’
পুলিশ সদস্যের নাম জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওই পুলিশের নাম জানি না। মারধর সামাল দিতে আমি ব্যস্ত ছিলাম। একপর্যায়ে আমাকে বাঁশখালী থেকে চলে যেতে বলা হয়।’
এসব অভিযোগের জবাবে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, ‘জাহিদুল বেছে বেছে জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেন। আমি অনেক অভিযোগ পেয়ে তাঁকে ইউএনও সাহেবের কার্যালয়ে ডেকে পাঠাই। এরপর ভুয়া নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে জাহিদুল আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। উত্তেজিত হয়েও তিনি কথা বলছিলেন। এসব নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। মারধরের ঘটনা সত্য নয়। তিনি সহানুভূতি পাওয়ার জন্য মারধরের অভিযোগ করছেন।’
কারা ভুয়া নির্বাচনী কর্মকর্তা জানতে চাইলে সাংসদ মোস্তাফিজ বলেন, ‘আমি বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের বাসিন্দা। আমার এলাকার একটি কেন্দ্রে ছনুয়া কাদেরিয়া হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ ফরহাদ নামের এক ব্যক্তিকে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ ওই স্কুলে ফরহাদ নামের কোনো শিক্ষক নেই। বরং কথিত ওই শিক্ষক জামায়াতের ক্যাডার বলে শুনেছি। জামায়াতের মামলার আসামিদের বেছে বেছে জাহিদুল নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। এসব নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল, যা আমি কমিশনে পাঠিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে ছনুয়া কাদেরিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসাইন শরীফির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
৪ জুন বাঁশখালীর ১৪টির মধ্যে ১১টি ইউপির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। রোয়ানুর আঘাতের কারণে খানখানাবাদ, গণ্ডামারা ও ছনুয়া ইউনিয়নের নির্বাচন আগেই স্থগিত করা হয়। জাহিদুল ইসলাম বাহারছড়া, কাতারিয়া ও গণ্ডামারা ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলে ইউএনও কার্যালয় থেকে জানানো হয়।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাঁশখালীর ইউএনও শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে দুজনের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে এসবের সত্যতা আমি যাচাই করে দেখিনি। কারণ, আমি ঘটনার সময়ে উপকূলীয় এলাকায় ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।’
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এর আগে বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইসি।

Print Friendly, PDF & Email