May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ব্লগার হত্যাকারীদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনের ছবি প্রকাশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে তথ্যদাতাকে পুরস্কৃত করবে ডিএমপি। তবে তথ্য দাতার নাম ও পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।

হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তরা হলো- শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১, সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২, সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আ. সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ এবং শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল।

আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের (এবিটি) শীর্ষ সংগঠক শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১। তার বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বলে জানা যায়। সে সংগঠনের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াও আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অপারেশনের সদস্য নির্বাচন ও সংগ্রহে প্রধান ভূমিকা পালন করে। টিএসসিতে অভিজিৎ রায় হত্যা, গোড়ানে নীলাদ্রি নিলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা ও সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যা মামলার তদন্তে সকল ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতি এবং সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শরিফুল জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা ও গত দুই মাসে সূত্রাপুরে সংগঠিত ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ, কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভির ফুটেজে তার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তার সম্বন্ধে তথ্যদাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ এবিটির গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সংগঠক। সে শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলে। তার উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, চশমা পড়ে, শ্যামলা বর্ণের এবং তার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, ওয়াশিকুর বাবু হত্যা, নীলাদ্রি নিলয় হত্যা, মিরপুরের স্কুল শিক্ষক হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তে সকল ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতি এবং সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে সূত্রাপুরে সংগঠিত ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ, কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও তনয় হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি উপস্থিতি ও সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি মামলার তদন্তে জানা যায়। সে সংগঠনের সদস্যদের সামরিক, আইটি ও কথিত জিহাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তার সম্বন্ধে তথ্যদাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। সে সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, হত্যাকাণ্ডে সে সার্বিক সমন্বয়কারী ও অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে। এ ছাড়া তদন্তে সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি অংশগ্রহণের বিষয়টি পাওয়া যায়। সে এবিটির বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করে। এবিটির এ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্পর্কে তথ্যদাতাকে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

আ. সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ এবিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার বাড়ি কুমিল্লা অঞ্চলে। সে সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যতম সদস্য। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, হত্যাচেষ্টায় সে সার্বিক সমন্বয়কারী ও অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালনসহ সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া সে সংগঠনের সদস্যদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে ধর্মীয় আলোচনা বা বয়ান দিয়ে থাকে। সে এবিটির দুর্ধর্ষ সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করে। এবিটির এ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্পর্কে তথ্যদাতাকে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

শিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল এবিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার বাড়ি চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলে জানা যায়। সে সংগঠনের সামরিক শাখার অন্যমত সদস্য। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হত্যাচেষ্টায় সে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও সে এবিটির বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করে বলে জানা যায়। এবিটির এ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্পর্কে তথ্যদাতাকে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস এবিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার বাড়ি ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায়। সে সংগঠনের সামরিক শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল নেতা। অভিজিৎ রায় হত্যা, নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার তদন্তে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সে সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সে এবিটির দুর্ধর্ষ সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করে। এবিটির এ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্পর্কে তথ্যদাতাকে ২ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে ডিএমপি।

ডিএমপি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে সংগঠিত ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে আসছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাড্ডার সাতারকুল ও মোহাম্মদপুরে এবিটির দুটি আস্তানায় গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে বাড্ডা সাতারকুলে এবিটির সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মোহাম্মদপুরের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। অভিযানে সেখান থেকে এবিটির দুই সদস্য গ্রেফতার হয় এবং একজন পুলিশ সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হন। গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্য ও সেখান থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নথিপত্রের ভিত্তিতে অত্র সংগঠনের আরও দুটি আস্তানার সন্ধান ঢাকার আশকোনা ও দক্ষিণখানে পাওয়া যায়। দক্ষিণখানে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ল্যাবরেটরি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। সকল অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য, চলমান মামলার তদন্তে এবং গ্রেফতার অন্যান্য আসামিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃস্থানীয়দের তথ্য পাওয়া যায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, চিহ্নিতদের সঠিক নাম-ঠিকানা পরিচয়সহ ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সর্ব-সাধারণের সহযোগিতা কামনা করছে ডিএমপি। তথ্য প্রদানের জন্য যোগাযোগের নম্বর— ০১৭১৩৩৭৩১৯৪, ০১৭১৩৩৭৩১৯৮, ০১৭১৩৩৭৩২০৬. ০২-৯৩৬২৬৪০। ইমেইল ঠিকানা— [email protected]। তথ্য দাতার নাম ও পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।

Print Friendly, PDF & Email