May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ফের মমতা, জয়ললিতার জয়: আসামে কংগ্রেসের ভরাডুবি

বিদেশ ডেস্ক : ভারতের পাঁ​চটি রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। এতে দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। তবে দীর্ঘ ১৫ বছর পর কংগ্রেসকে হারিয়ে আসামে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি জোট। কেরালায় সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ এবং পদুচেরিতে কংগ্রেস সরকার গড়তে চলেছে।
mamata-jay lalitaপশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ২৯৪ টির মধ্যে ২১১টি আসন পেয়েছে। এই রাজ্যে কংগ্রেস ৪৪টি এবং বাম-কংগ্রেস জোট মিলে ৭৬টি আসন পেয়েছে। আগামী ২৭ মে দ্বিতীয়বারের মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণের কথা রয়েছে।
তামিলনাড়ুতে ২৩৪ আসনের মধ্যে জয়ললিতার নেতৃত্বাধীন এআইডিএমকে পেয়েছে ১৩১টি। ডিএমকে পেয়েছে ৯৪টি আসন।
আসামে ১২৬টির মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৮৫টি, কেরালায় ১৪০টির মধ্যে এলডিএফ ৮২টি, পদুচেরিতে ৩০টির মধ্যে কংগ্রেস ১৭টি আসন পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতাকে সবাই ‘দিদি’ নামেই ডাকে আর তামিলনাড়ুতে জয়ললিতাকে ডাকা হয় ‘আম্মা’ নামে। বিশ্লেষকেরা তাই বলছেন ভোটাররা ‘দিদি’ আর ‘আম্মা’র ওপরই আস্থা রেখেছেন।
নির্বাচনে কংগ্রেসের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে ভরাডুবি ছাড়াও কেরালায় ক্ষমতাচ্যুত হতে চলেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। তামিলনাড়ুতে জোটসঙ্গী ডিএমকের সঙ্গে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসেরও। পদুচেরিতে শুধু কংগ্রেস-ডিএমকে জোট এআইএনআরসির চেয়ে এগিয়ে থেকে সরকার গঠনের সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছে। ৫ রাজ্যের এমন ফল মেনে নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, ‘জনগণের রায় আমরা মেনে নিয়েছি।’
ইতিহাস গড়লেন মমতা:
১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে কোনও শাসক দল এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলো। আর এতেই ইতিহাস গড়ে ২১৭ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলেন মমতা। গতবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে দলের ঝুলিতে ঢুকেছিল ১৮৪টি আসন। এবার একক লড়াইয়ে সেই সংখ্যাকে তৃণমূল ছাপিয়ে গেল। কংগ্রেস-তৃণমূল মিলে যত আসন জিতেছিল ২০১১ সালে, এবার তৃণমূল একাই সেই সংখ্যার কাছাকাছি। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে মানুষকে ধন্যবাদ দিয়েছেন মমতা। মাসব্যাপী রাজ্যজুড়ে বিজয়োৎসব পালনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মমতা বলেন, গত ২ বছর ধরে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। তার দাবি, ভোটের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্নীতির ইস্যু তোলা হয়। তার প্রতি জনগণের রায়ের মধ্য দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। যারা দুর্নীতির ইস্যু তুলেছেন তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন মমতা।
বামদের সঙ্গে জোট করাটা কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভুল বলে উল্লেখ করেছেন মমতা। একইসঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার জন্য সিপিএমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘এই ভোটের ফলে জাতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেস ও রাজ্যে সিপিএমের ক্ষতি হয়েছে।’
মমতা বলেছেন, বিজেপির সঙ্গে মতাদর্শগত ফারাক রয়েছে। তবে বিজেপিকে ইস্যুভিত্তিক সমর্থনে আপত্তি নেই।
sonayelবাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা আসামের হবু মুখ্যমন্ত্রীর:
আসাম রাজ্যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি। এই অবস্থায় আসামের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আসামে বিজেপির মনোনীত মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী সর্বানন্দ সোনোয়াল। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র সঙ্গে কথা বলেন সর্বানন্দ সোনোয়াল (৫৪)। তিনি বলেন, ‘অনুপ্রবেশ বন্ধে আমরা প্রথমেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেবো।’ প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হবে বলেও জানান সর্বানন্দ সোনোয়াল।
সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, অনুপ্রবেশ, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করা, ছোট পরিসরে চা উৎপাদনকারীদের সমস্যা ও বেকারত্বের মতো ইস্যুগুলোই তার প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই ইস্যুর সমাধানে সরকার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করবে। নির্বাচনি প্রচারণাও এর উল্লেখ ছিল।
এই বিজেপি নেতা বলেন, মানুষ কংগ্রেসের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারা পরিবর্তন ও ভালো সরকার চেয়েছিলেন। এটা একটা বিশাল বিজয়। মানুষ আমাদের জয়ের সমীকরণ মেনে নিয়েছেন। আসামের মানুষ এটাই চেয়েছিলেন। আমাদের মূল লক্ষ্য সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া; তারা হিন্দু অথবা মুসলিম যাই হোক না কেন!
সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, আমরা বৃহত্তর আসামীয় সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণ করবো। এদের মধ্যে আসামিজ, বিহারি মাওয়াড়ি, বাঙালি, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ… সবাই রয়েছেন। আমরা একযোগে কাজ করবো, একসঙ্গে থাকবো এবং একসঙ্গে লড়াই করবো।
ভারতের রাজনীতিতে আসামে বিজেপি’র এই জয়কে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, তারা এই প্রথম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে যাচ্ছে। সূত্র: এনডিটিভি, জি নিউজ।

Print Friendly, PDF & Email