ডেস্ক প্রতিবেদক : হেমন্তের সকাল, আকাশে স্নিগ্ধ মেঘ রাশি ভেসে বেড়াচ্ছে। মিষ্টি রোদের ঝলকানিতে শরীর ও মনে কেমন এক ভালোলাগা অনুভূতি।
হেমন্তের ছোঁয়ায় প্রকৃতির অপরূপ সাজে যেন ভেসে যাচ্ছে দ্বীপদেশ জাপান! আর ওসাকার কাছেই আরাশিয়ামা যেন রূপের রাজকন্যা সেজেছে এই মৌসুমে! তাই বেরিয়ে পড়লাম আরাশিয়ামা দর্শনে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বেয়ে চলা ট্রেনের লাইন ধরে ওসাকা শহর থেকে এক ঘণ্টার পথ আরাশিয়মার। পথে যেত যেতে চোখে পড়ল কখনও লোকালয় আর কখনও নিস্তব্ধ পাহাড়।
এই জায়গাটিতে হেমেন্তর শেষে আর বসন্তের শুরুতে বেড়াতে আসা মানুষের ভিড় বাড়ে। ‘যন্ত্রমানব’ হিসেবে পরিচিত জাপানিরাও তাই ছুটির দিনগুলোতে হয়ে উঠে প্রকৃতিপ্রেমী।
ট্রেন থেকে নেমে মাত্র কয়েক মিনিট হাঁটার পর চোখে পড়ল আরাশিয়ামার সৌন্দর্য। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই যেন চলছে প্রকৃতির লীলা!
লাল, সবুজ, হলুদ, খয়েরি আর রঙিন সব গাছের পাতা পুরো এলাকাকে মেলে ধরেছে ভিন্ন এক অদেখা সৌন্দর্য্যে!
ম্যাপল, কোইদে নামের গাছগুলো পুরো পাহাড়কেই ঢেকে দিয়েছে। আর শত শত মানুষের আনাগোনা আমার সঙ্গে যেমন ছিলেন কয়েকজন বাঙালি আবার তেমনি ছিলেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ও বন্ধুরাও।
আরাশিয়ামায় গিয়ে প্রথমে চোখে আটকে গেল একই নামের একটি নদীর দিকে। শীতল, স্বচ্ছ জলধারার মাঝখানে একটি সেতু। হাঁটু জলের এই নদীতে ছোট ছোট নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকেই। পানি যত স্বচ্ছ তার চেয়ে বেশি শীতল। তাই পানিতে নামার চেষ্টায় ব্যর্থ হতে হল!আশেপাশের কৃষ্ণচুঁড়ার মতো দেখতে ‘আগুনঝড়া’ ফুল অনায়াসে মনকে মাতাল করে তুলছে। পাশেই বিশাল এক বৌদ্ধ মন্দির। তেনরিজি নামের প্রাচীন এই মন্দিরটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেইজের তালিকায় আছে। মন্দিরের পাশেই একটি জলাধারে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। শত শত পর্যটক এই মাঝের ছবি তোলায় ব্যস্ত।
পাহাড়ের নিচে এই মন্দিরের পাশেই আর একটি মন্দির ‘নিশন’। এই মন্দিরের ভিতর ঐতিহাসিক সব আসবাবপত্র দেখে বোঝা যায় জাপানিরা কতটা শ্রম দিয়ে গড়েছে এমন প্রার্থনালয়টি।
প্রকৃতির অকৃত্রিম রূপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেই সম্ভবত জাপানিরা আরাশি পাহাড়ের এই অংশকে বেছে নিয়েছে প্রার্থনার জায়গা হিসেবে।
আর পাহাড়ে পাশে পথ বেঁয়ে উঠে দেখা পেলাম অদ্ভুত সৌন্দর্যের এক বাঁশ বাগানের। আমাদের দেশের বাঁশ থেকে ভিন্ন প্রজাতির এই বাগান দেখলে যে কারও মন্দমন ভালো হয়ে যাবে এটা বলা যায়। ঢালু পথের চারপাশে উঁচু সবুজের সহজাত উপস্থিতি মন কেড়ে নিচ্ছে বারবার। আর পথ যেন কিছুতেই শেষ হতে চাচ্ছে না!এভাবেই দিনের আলো ফুরিয়ে যখন অন্ধকার নামছে, ঠিক তখন আরাশিয়ামার লাইটপোস্টের বাতিগুলো জ্বলে উঠতে লাগলো।
সন্ধ্যায় দেখা মেললো ‘আলোক ধাঁধার’। কৃত্রিম আলোর ছটায় আরাশিয়ামা যেন আরও একবার নতুন করে দেখা দিল। রঙিন পাতার গাছগুলোতে আলোর ছটা ঝলসে যেন তৈরি করছে এক অপরূপ রূপের।
রাতের আঁধারের ছোঁয়ায় পেছনের নীল আকাশ আরও বেশি গাঢ় হয়ে ধরা দিল চোখে। চোখ যেন পলক ফেলতে চাইছে না সারাদিনের ঘোরাঘুরির ক্লান্তি কিছুতেই স্পর্শ করতে পারলো না।
বেঁচে থাকুক প্রকৃতির লীলার সঙ্গে আরাশিয়ামার এই মেলবন্ধন।
এ বিভাগের আরো..
পানির বোতলের মুখের রং লাল, নীল রং এর অর্থ কী?
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অমর হোক: অমর একুশে, মাতৃভাষা ও আমরা
ছয় দফা: স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সেতুবন্ধ