April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

আল্লাহর কাছে কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত

ডেস্ক : ইসলামে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় পোষা প্রাণীকে কোরবানি করার বিধান রয়েছে। শুধুমাত্র যাদের সামর্থ রয়েছে এমন মুসলমানদের ওপরই কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে। তবে কিতাব ও সুন্নাহর বিচারে এ কথা প্রমাণিত যে, যতক্ষণ না প্রাথমিকভাবে (যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত) দুটি শর্ত পূরণ করা না হয় ততক্ষণ কোনো আমল বা ইবাদতই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না।

এক: কোরবানি যেন শুধুমাত্র মহান আল্লাহরই উদ্দেশ্যেই হয়। তা না হলে ওই আমল বা ইবাদত আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। যেমন: কাবিলের নিকট থেকে কোরবানি কবুল করা হয়নি। তার কারণ হিসেবে হাবিল বলেছিলেন, আল্লাহ তো মুত্তাক্বীদের (পরহেজগার ও সংযমী) কোরবানিই কবুল করে থাকেন। (সুরা মায়িদা, ৫:২৭)

যে কোরবানি হালাল উপার্জন ও আত্মিকভাবে দেওয়া হয় না, সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “আমার কাছে ওগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত বা রক্ত কোনোটাই পৌঁছে না। আমার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে আমি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পার এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। কাজেই সৎ কর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ, ২২:৩৭)

দুই. তা যেন আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)’র নির্দেশিত বিধি-বিধান অনুযায়ী হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। (সুরা কাহফ, ১১০)

সুতরাং যারা কেবল গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে অথবা লোক সমাজে নিজের নাম ফলাও করে প্রচারের উদ্দেশ্যে মোটা-তাজা ও অতিরিক্ত মূল্যের পশু কোরবানি দেয়। এবং যারা তা প্রদর্শন ও প্রচার করে থাকে তাদের কোরবানি যে ইবাদত হিসেবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়- তা বলাই বাহুল্য।

কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার শর্ত:
কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশকিছু শর্ত রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে শুদ্ধভাবে কোরবানি করা প্রত্যেক কোরবানি দাতার জন্য একান্ত প্রয়োজন।

এক. অবৈধ অর্থ বা টাকা যেমন- সুদ, ঘুষ, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা, আত্মসাৎ প্রভৃতি উপায়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে কেনা পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। কোরবানিদাতা যেন বৈধভাবে ওই পশুর মালিক হয়। সুতরাং চুরিকৃত, আত্মসাৎকৃত, বন্ধকী পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া, অবৈধ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে কেনা পশু, কেনার সময় ফাঁকি দিয়ে টাকা কম দেওয়া (খাজনা না দেওয়া) বা ঠকানোর মাধ্যমে কেনা পশুর কোরবানি আদায় হবে না। যেহেতু কোরবানি একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয় সেহেতু অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে কোরবানির ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। আর যেহেতু অবৈধ উপার্জন হালাল নয় সুতরাং হারাম বা নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও সন্তুষ্টি কোনোটিই সম্ভব নয়।

দুই. কোরবানির পশু যেন সেই শ্রেণি বা বয়সের হয় যে শ্রেণি ও বয়স শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। সেগুলো হলো- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় বাহিমাতুল আনআম। এ বিষয়ে সুরা হজ এর ২২:৩৪ আয়াতে বলা হয়েছে- “আমি প্রত্যেক সম্প্রদাযের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি এবং তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।”

হাদিসে আছে- তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার। (মুসলিম, হাদিস নং ১৯৬৩) একটি উট ও গরু-মহিষে সাত ব্যক্তি কোরবানির জন্য শরিক হতে পারে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৩১৮)। অন্য এক বর্ণনামতে, উট কোরবানিতেও ১০ব্যক্তি শরিক হতে পারে।

তিন. শরীয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছর, গরু বা মহিষ অন্তত দুবছর, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কোরবানি করা যায় । প্রিয় নবী (সা.) বলেন, দাতালো ছাড়া জবেহ করো না। তবে তা দুর্বল হলে ছয় মাসের মেষ জবেহ কর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৬৩)। কিন্তু উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, ছমাস বয়সী মেষের কোরবানি সিদ্ধ হবে; তা ছাড়া অন্য পশু পাওয়া যাক অথবা না যাক।

চার. কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে, সাহাবি বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েয হবে না। অন্ধ. যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে। নাসাঈর বর্ণনায় আহত শব্দের স্থলে পাগল উল্লেখ আছে। (তিরমিজি-১৫৪৬)

Print Friendly, PDF & Email