April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

টঙ্গীতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে মরে গেছে অর্ধকোটি টাকার মাছ

টঙ্গি প্রতিনিধিঃ টঙ্গীর মিলগেট এলাকার একটি কারখানার ৫টি ইউনিটের অপরিশোধিত তরল বর্জ্যে পার্শ্ববর্তী তুরাগ মৎস্য খামারের মাছ মরে ভেসে উঠেছে। শুক্রবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। ক্রিয়েটিভ ওয়াশিং এন্ড ডায়িং নামে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ মরেছে বলে দাবী করেছে খামার কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই কারখানায় ইটিপি থাকলেও অধিকাংশ সময় তা বন্ধ রাখা হয়।

অপরিশোধিত তরল বিষাক্ত বর্জ্যে কারখানার মৎস্য খামারের পুকুরের পানি বর্তমানে মিশমিশে কালো হয়ে গেছে। বিষের ক্রিয়ায় পুকুরে হাজার হাজার মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মরা মাছের উৎকট পঁচা গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।এতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে টঙ্গী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

খামারী বাচ্চু মিয়া জানান, টঙ্গীর কাঠালদিয়া এলাকায় তারা প্রায় পাঁচ একর আয়তনের পুকুরে মৎস্য খামার করেছেন। তারা এলাকার ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র মানুষ একটি সমিতি করে তুরাগ বহুমুখী মৎস্য খামার পরিচালনা করে আসছেন। সার্বক্ষণিক পাঁচজন জেলের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত থাকেন। শুক্রবার ভোর রাতে কারখানার বিষাক্ত অপরিশোধিত পানি পুকুরের পানির সাথে মিশে যায়। বিষের ক্রিয়ায় সকাল থেকে মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। এই মৌসূমে কোনভাবেই আর পুকুরে মাছ চাষ সম্ভব হবে না। চলতি বছরে পুকুরে ১০ লাখ টাকার প্রায় এক লাখ মাছের পোণা অবমুক্ত করা হয়েছিল। তাছাড়া পুকুর রক্ষণাবেক্ষণে আরও পাঁচ লাখ টাকা খরচতো আছেই। আর দুই মাস পর থেকেই মাছ ধরা শুরু হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে প্রতিটি মাছ ছয়শ থেকে নয়শ গ্রাম ওজনের হিসাবে প্রায় ৫০ হাজার কেজি মাছ বিনষ্ট হলো। বাজার মূল্যে তা প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। বর্ষার পর বিষাক্ত পানি সেচ দিয়ে পুকুর আবার নতুন করে তৈরী করতে হবে। একই ঘটনা ২০১৩ সালে ঘটার পর গত দুই বছরে কঠোর পরিশ্রম করে তারা পুকুরটি তৈরী করেছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষকে বারবার মিনতি করার পরও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এখন সমিতির বিশটি পরিবারের সদস্যরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে তিনি জানান।

এব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন বলেন, খামারে ভেসে ওঠা পচাঁ মাছের দুর্গন্ধে বেশ কয়েকবার বমি করেছি। এছাড়াও এলাকার শিশু ও মহিলারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

এব্যাপারে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রেজা আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইতোপূর্বেও এরকম ঘটনা ঘটেছিল। আমরা মৎস্য খামারের মালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সমাধান করেছি। এটাও আমরা সমাধান করবো।

এব্যাপারে টঙ্গী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালে ওই মৎস্য খামারের কয়েক লাখ টাকার মাছ বিনষ্ট হয়। তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে টঙ্গী থানায় মুচলেকা দিয়েছিল।কিন্তু দুই বছরের মাথায় ফের একই ঘটনা ঘটল।

Print Friendly, PDF & Email