April 28, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ : আদেশ বুধবার

আদালত প্রতিবেদক : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন-২০০৬ এর (সংশোধনী ২০১৩) ৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের আদেশ বুধবার।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বিত বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

শুনানিতে অংশ নেন আবেদনকারীর আইনজীবী শিশির মনির।

এর আগে ২৬ আগস্ট বিকেলে এ আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরবর্তী সময়ে জামিনে থাকা জাকির হোসেনের পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী শিশির মনির।

আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারায় বলা রয়েছে, ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারো মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা।

এ ছাড়া ৪৬ ধারায় বলা আছে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, নিরাপত্তা কিংবা কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নস্যাতের মতো কোনোকিছু প্রকাশ হলে সে তথ্য সম্প্রচারে বাধা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ।

৭১ ধারায় অভিযুক্তদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সাইবার ট্রাইব্যুনালকে শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

রিটে আইন সচিব, তথ্য যোগাযোগ সচিব ও প্রযুক্তি সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট দায়েরের দিন শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ কারাদণ্ড ১৪ বছর ও এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ একই অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এটি সরাসরি বৈষম্য।

আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারাটি সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হওয়ায় ধারাটি চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়েছে’— উল্লেখ করেন শিশির মনির।

তিনি আরও বলেন, ‘আইনটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। এর উদাহরণ সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা। তাই সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের চোখে সকলে সমান এবং ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৫৭ ধারাটি সাংঘর্ষিক।’

ওই আইনের ৫৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।’

‘কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক ১৪ বছর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের সংশোধনী ২০১৩-এর দু’টি ধারা বাতিল করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবী।

নোটিশে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং তথ্য সচিবকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের দু’টি ধারা বাতিল করার জন্য বলা হয়েছে। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে নোটিশে।

Print Friendly, PDF & Email