May 14, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ঈদে চামড়া সঙ্কটে বাজার হারানোর ভয়

বিশেষ সংবাদদাতা : কোরবানি ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে গরু আমাদানি বন্ধ থাকায় দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন দেশের চামড়া শিল্প মালিকরা। চাহিদার তুলনায় গবাদি পশু কম কোরবানি হওয়ার শঙ্কা থেকে চামড়া সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন তারা। আর যদি তা হয়, তবে ইউরোপভিত্তিক বিশাল চামড়াজাত পণ্যের বাজার হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন ট্যানারি মালিকরা।

বিশ্লেষকদের মতে- ভারতনির্ভর বাংলাদেশের গবাদি পশুর যে বাজার গড়ে উঠেছে তা বন্ধ হওয়ায় এ বছর কিছুটা সমস্যা হলেও দেশীয় খামারি এবং চরাঞ্চলের কৃষরা যোগান দিতে পারবে। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে এবং চামড়ার দামও বাড়বে।

আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশে গরুর সঙ্কট সৃষ্টি ও দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এ খাতের ব্যবসায়ী ও কোরবানি দতারা। আর মজুদ থেকে একসঙ্গে এত গরু জবাই হলে দেশের প্রাণিসম্পদের ওপর চাপ পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় পশু বাংলাদেশে রয়েছে। এর ফলে দেশের পশু পালনকারীরা ভালো দাম পাবে।

এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউছুফের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া আর্থিক সচ্ছলতার কারণে কোরবানির সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে বছরে ৮০ থেকে ৯০ লাখ গরু এবং মহিষ জবাই হচ্ছে। এর সিংহভাগ কোরবনির সময়ে হয়ে থাকে। তবে যোগান কম থাকায় এ বছর ১০ থেকে ১৫ লাখ পশু কম কোরবানি হতে পারে। এ জন্য চামড়া শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা চাপে পড়তে পারে এবং ক্রেতাদের ক্রয় আদেশ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

তিনি বলেন, “ভারত সরকারের যে সিদ্ধান্ত, সে বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এর ফলে হয়তো বর্ডার খুলতেও পারে। তা না হলে সাময়িক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যা পরবর্তী তিন থেকে চার বছর অব্যহত থাকবে। তবে এর একটি ভালো দিক রয়েছে, ভারত গরু রপ্তানি নাই করে তাহলে নিজস্ব উৎপাদনে বাড়বে। খামারি ও কৃষরা পশু পালনে ঝুঁকবে। দেশীয় পশু ব্যবসায়ীরা লাভবন হবে। তারা চামড়ার ভালো মূল্য পাবেন।”

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, “কোরবানির সময়ে আমরা সারা বছরের যোগান সংগ্রহ করে থাকি। এ সময়টাতে বিদেশিরা ক্রয় আদেশ দিয়ে থাকে। গত বছর কোরবানির পশুরু সংখ্যা (সরকারি হিসেবে) ৫০ লাখ ছিল। এ বছর তা কমে ২৫ লাখে আসতে পারে। সরকার উদ্যোগ গ্রহণ না করলে দেশের চামড়া শিল্প বিরাট হুমকির মুখে পড়বে। যার ফলে অনেক ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে প্রতিবেশিদের কাছে চলে যাবে।”

চামড়া শিল্পের সুনাম নষ্ট করতে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে সালাম ট্যানারির এ মালিক বলেন, “সরকার ভারতের বিকল্প হিসেবে নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার বা পাকিস্তান থেকে পশু আমদানি করতে পারে। যা সরকারের পশু আমদানি নীতির ওপর নির্ভর করবে। সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত দেশের ট্যানরি শিল্প রক্ষায় ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা বছরের চাহিদার ৫০ শতাংশ গরু জবাই হয় কোরবানিতে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ৮৬ লাখ ২২ হাজার গরু-মহিষ জবাই হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭২ লাখ গরু। বর্তমানে দেশে গরু আছে দুই কোটি ৩৬ লাখ। এর একটি বড় অংশ গাভি ও কম বয়সী। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ লাখ জবাই উপযোগী। ঘাটতি গরুর চাহিদা মেটাতে বাজারে কিছু গাভিও চলে আসবে। পাশাপাশি ভারত থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু গরু আসবে।

এদিকে ভরত বাংলাদেশে গরু আমদানি বন্ধ করলেও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কক্সবাজারের মিয়ানমার করিডোর দিয়ে ব্যবসায়ীরা গবাদি পশু আমদানি শুরু করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে ১৯ আগস্ট বুধবার সকালে মিয়ানমার থেকে কয়েকটি ট্রলারে প্রায় ৪ শতাধিক গবাদি পশু আমদানি করা হয়েছে। এ আমদানির ফলে দেশের চাহিদা অনেকটা পূরণ করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের পরেই ২ মিলিয়ন টন মাংস রফতানি করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। তালিকায় তিন নম্বরে আছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের রফতানির পরিমান দেড় মিলিয়ন টন। আর তিন দেশ মোট গরুর মাংস রফতানি করছে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ভারত একাই সাড়ে ২৩ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ২০ দশমিক ৮ শতাংশ।

Print Friendly, PDF & Email