May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

একপয়সা করে জমিয়ে সুভাসিনীর ‘হিউম্যানিটি হাসপাতাল’

অবশেষে পথে পথে ঘুরে সবজি বেচার টাকা জমিয়ে একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন সুভাসিনী মিস্ত্রী। তার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটির নাম ‘হিউম্যানিটি হসপিটাল’। ২৩ বছর বয়সে স্বামী হারিয়েছিলেন সুভাসিনী। স্বামীর মৃত্যুর পর পণ করেছিলেন তাদের মতো গরিবরা যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা না যান তার জন্য একটা কিছু করবেন তিনি। অবশেষে সুভাসিনীর সেই স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। ওপিনিয়নস পোস্ট।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার হংসপুকুর এখন অনেকেরই চেনা। হংসপুকুরের এই পরিচিতির পেছনে রয়েছে সুভাসিনী মিস্ত্রী নামের অতি সাধারণ এক নারীর কীর্তি।

অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সুভাসিনীর বিয়ে হয়েছিল এক দিনমজুরের সঙ্গে। সুভাসিনীর বয়স তখন মাত্র ১২। বাধ্য হয়ে বাল্যবিয়ে করা মেয়েটি বিধবাও হয় মাত্র ২৩ বছর বয়সে। কিন্তু সেসময় রোগগ্রস্থ হয়ে পড়েন তার স্বামী। চিকিৎসার টাকা না থাকায় প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান সুভাসিনীর স্বামী।

স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে বেশ কয়েক বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে থালাবাসন মেজেছেন। তাতে যে আয় হতো তার পুরোটা ব্যয় করেননি। কস্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে রাখতেন তিনি। উদ্দেশ্য স্বপ্ন পুরণ। ভবিষ্যতে একটি হাসপাতাল করবেন দরিদ্র মানুষদের জন্য।  তিনি পণ করেছিলেন ‘সব গরিবকে আর এভাবে মরতে দেয়া যাবে না, গরিবের জন্য একটা কিছু করতে হবে।’

আর দশটি সাধারণ মানুষের  থেকে তাই সুভাসিনী একবারেই ভিন্ন। কারণ অন্যদের মতো এমন চিন্তা করলে তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না। সুভাসিনীর স্বপ্ন, তার প্রতিজ্ঞাটা যে অনন্যসাধারণ। গরিবের জন্য হাসপাতাল গড়ার সেই স্বপ্নটাকে কখনো ধুসর হতে দেননি তিনি।

স্বামীর মৃত্যুর সময় সুভাসিনী দিনে মাত্র ৫ পয়সা আয় করতেন। ঘরভাড়া বাবদ দুপয়সা, দুপয়সা যেত খাওয়াদাওয়া আর বাকি এক পয়সা জমাতেন তিনি। তারপর এক সময় শাকসবজি বিক্রি শুরু করলেন। আয় কিছুটা বাড়লেও বিলাসিতার জন্য কখনো একটা পয়সাও ব্যয় করেননি।

এভাবেই তিল থেকে তাল করছেন তিনি। এক সময় এক এক করে জমে যায় এক লাখ ভারতীয় মুদ্রা। সেই টাকায় হংসপুকুরে এক একর জমিও কিনে ফেলেন। বড় ছেলে ততদিনে স্নাতক পাশ করে। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছিলেন না বলে মেজ ছেলে অজয়কে অনাথ আশ্রমে দেন সুভাসিনী। অজয় সে সময়  পড়ার পাঠ চুকিয়ে ডাক্তার হয়েছেন। তারপর সুভাসিনী অজয়কেই বললেন, ৪০ বছর ধরে লালন করে আসা স্বপ্নটির কথা। শুরু হলো ছোট্ট একটা কুড়ে ঘরে গরিব রোগীদের চিকিৎসা। সেটি ১৯৯৩ সনের কথা।

অজয়ের ডাক্তার বন্ধুরাও যোগ দিলেন বিনা পারিশ্রমিকে গরিবদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কাজে। প্রথম দিনে বিনা খরচে তারা চিকিৎসা সেবা দেন ২৫২ জন মানুষকে। এতগুলো মানুষকে সার বেঁধে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মৃত স্বামীর কথা মনে করে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলেন সুভাসিনী মিস্ত্রী।

১৯৯৩ সালের সেই ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটি আজ আয়তন এবং খ্যাতিতে অনেক বড়। তিন একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুভাসিনীর স্বপ্নের সেই হাসপাতাল।

একজন সৎ, নিষ্ঠাবান মানুষের কল্যাণের স্বপ্ন পূরণের সংকল্প এবং প্রয়াস দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। এখন তার প্রতিষ্ঠিত হিউম্যানিটি হসপিটালে দুঃস্থ রোগীদের মুখে হাসি ফোটান সুভাসিনী। নিজেও হাসেন পরম তৃপ্তির হাসি।

Print Friendly, PDF & Email