পুলিশ বুধবার সকালে সাংবাদিক প্রবীরকে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতে হাজির করলে বিচারক হামিদুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন।
প্রবীর সিকদারের আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু বলেন, “পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় বিচারক তাকে জামিন দিয়েছেন।”
তাছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে প্রবীর সিকদার তার ভুল স্বীকার করায় বাদীপক্ষ তার জামিনের আবেদনে বিরোধিতা করেনি বলে জানান তিনি।
এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে এ আদালতই মঙ্গলবার পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করে প্রবীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল। এ মামলার পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছিল ২২ অগাস্ট।
মামলার বাদী আইনজীবী স্বপন পাল বলছেন, এক দিনেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রবীরকে আদালতে হাজির করা হয়।
ফেইসবুকে লেখালেখি করে হুমকি পেয়ে ঢাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীর সিকদার।
কিন্তু পুলিশ জিডি নেয়নি জানিয়ে গত ১০ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাসে নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকির কথা বলেন এই সাংবাদিক।
‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”
এই লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে রোববার রাতে ফরিদপুর সদর থানায় মামলা করেন আইনজীবী স্বপন পাল। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এই মামলা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই মন্ত্রী মোশাররফ ফরিদপুরের সংসদ সদস্য। মামলার বাদী স্বপন পাল ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকার ফার্মগেট থেকে প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই রাতেই তাকে ফরিদপুরে নিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবারে একই আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
আগের দিন তার পক্ষে ফরিদপুরের সন্তান প্রবীরের পক্ষে আগের দিন আদালতে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালেও রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু।
প্রবীর সিকদার এর আগে ঢাকায় সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন।
দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধির দায়িত্বপালনকালে ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকেই পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।
একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণেই ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করানো হয়েছিল বলে প্রবীরের অভিযোগ।
এই সাংবাদিককে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় চলছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন। দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। প্রতিবাদ জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।
সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রবীর সিকদারের মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
এ বিভাগের আরো..
ঢাকা-ব্রাজিল সামগ্রিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর
দুই সিটির নবনির্বাচিত মেয়ররা শপথ নিলেন
শেখ হাসিনা গাজা পুনর্দখলের ইসরাইলি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন