April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের নিঃর্শত মুক্তি দাবি করেছে ‘বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ’। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। এ সময়ের মধ্যে তাকে মুক্তি না দেওয়া হলে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ করে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সোমবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, প্রবীর সিকদার আগে থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন এবং রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তাও চেয়েছিলেন। অথচ রাষ্ট্র নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাকেই আটক করে মামলা দিয়েছে। প্রবীর সিকদারকে গ্রেফতার করে প্রশাসন তার সঙ্গে অন্যায় করেছে। তাকে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিকরা আন্দোলনে নামলে এর দায়ভার প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।

মানববন্ধনে প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিকা সিকদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে সুস্থভাবে ফিরে পেতে চাই। ছেলে সুপ্রিয় সিকদার মানববন্ধনে রবিবার সন্ধ্যায় তার বাবা প্রবীর সিকদারকে কীভাবে আটক করা হয় সে ঘটনা বলে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে একাংশ) সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অঞ্জন রায়, অমিয় ঘটক‍পুলক, আশীষ কুমার দে, খায়রুজ্জামান কামাল, হোসেন শহীদ মজনু, খায়রুল আলম, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক কামাল পাশা, বাপ্পাদিত্য বসু প্রমুখ।

এর আগে, রবিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের নিজ পত্রিকা কার্যালয় থেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে প্রবীর সিকদারকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। রাত ১১টায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন ফরিদপুরের আদালতের এপিপি স্বপন পাল।

প্রবীর সিকদার সম্প্রতি নিজের জীবনের শঙ্কা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম উল্লেখ করায় মন্ত্রীর মর্যাদাহানি হয়েছে এমন অভিযোগে আইসিটি এ্যাক্টে মামলা করা হয়। মামলা দায়েরের পর রবিবার রাতেই মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় থেকে তাকে ফরিদপুরে নেওয়া হয়।

প্রবীর সিকদার গত ১১ আগস্ট সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে ‘আমার জীবন শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ এই শিরোনামে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দেন। তাতে লেখা হয়, ‘আমি আমার জীবনের শঙ্কার কথা পুলিশকে জানিয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। তখনও ফেসবুকের মাধ্যমে আমার জীবন শঙ্কার কথা জনতার আদালতে পেশ করেছিলাম। আর কোনো অভিযোগ করবার সময় ও সুযোগ আমি নাও পেতে পারি। আমি আজ ফেসবুকের মাধ্যমে জনতার আদালতে জানিয়ে রাখছি আবার সেই জীবন শঙ্কার কথা। আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শঙ্কা, তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন— ১. এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিনজনের অনুসারী-সহযোগীরা। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি সকল দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইছি।’

২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কলাম লেখায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন প্রবীর সিকদার। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। হামলায় তাকে একটা পা হারাতে হয়। পরে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর তিনি সমকাল ও কালের কণ্ঠে সাংবাদিকতা করেন। বর্তমানে তিনি নিজে একটি দৈনিক ‘বাংলা ৭১’ ও একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘উত্তরাধিকার নিউজ ডটকম’ চালাচ্ছেন। তবে তিনি জনকণ্ঠে থাকাকালীন ‘সেই রাজাকার’ শিরোনামে একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

প্রবীর সিকদারের ছেলে সুপ্রিয় সিকদার বলেন, ২০০১ সালে বাবা জনকণ্ঠ পত্রিকায় মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। এরপর বাবার ওপর হামলা করা হয়। কয়েক দিন আগে ওই কলামটি নিজের অনলাইন ও দৈনিকে প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই বাবাকে বেনামে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email