নিজস্ব প্রতিবেদক : খিলগাঁওয়ের জাহানারা বেগম সারাদিন বাসায় একাই থাকেন। তার ভাষায়, একদিন হঠাৎ করে অনলাইন শপিং থেকে আমার কাছে একটি শাড়ি আসলো। শাড়ি যে নিয়ে এসেছে, সে বলে, এটা নাকি আমার ছেলে পাঠিয়েছে। আমি তো অবাক। আমার একমাত্র ছেলে চাকরি করে ঢাকার বাইরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সে কীভাবে শাড়ি পাঠবে! সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে কল দিতেই আমার ছেলে বললো, মা, ঈদে আসতে দেরি হবে, তাই অনলাইন শপ থেকে এই শাড়িটা কিনেছি তোমার জন্য। কিন্তু তোমাকে বলতে ভুলে গেছি।
প্রযুক্তির কল্যাণে এভাবেই বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা। কথা বলা, গল্প করা, রাজনীতির আলাপ থেকে শুরু করে ঈদের কেনাকাটা পর্যন্ত অনলাইনে চালু হয়েছে। এবার ঈদের অনলাইন বাজার বেশ জমেও উঠেছে।
দূরত্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। প্রচণ্ড গরমে তীব্র যানজটে বসে নাকাল হওয়া, বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা কিংবা এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে কেনাকাটা শেষে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে ঘরে ফেরার দিন প্রায় শেষ হতে চলেছে।
অনলাইনের বাজারগুলোতে এখন কী না পাওয়া যায়! ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, মেয়েদের পার্টি ড্রেস, পাখি ড্রেস, ব্রাসোর থ্রি-পিস, সুতি থ্রি-পিস, পাকিস্তানি লনের রেপ্লিকা ও অরিজিনাল থ্রি-পিস, জুতা, সানগ্লাস; এমনকি ঘড়ি, টুপি, আতর, জায়নামাজসহ সবই পাওয়া যায় অনলাইন শপিং পোর্টাল গুলোতে।
অনলাইন জগতে অধিকাংশ পণ্য মূলত তরুণরাই কিনে থাকে। তরুণদের এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ গ্রাহককে ঘরে বসে কেনাকাটার এই সেবা দিতে দেশে বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল চালু হয়েছে। এসব পোর্টালের বেচাকেনাও বেশ ভালো।
আজকের ডিলডটকম, এখানেইডটকম, বাংলাদেশব্র্যান্ডসডটকম, প্রিয়শপডটকম, হাটবাজার, বিক্রয়ডটকম, ওএলএক্স, সেলবাজারসহ বেশকিছু অনলাইন পোর্টাল রয়েছে, যেখান থেকে ঈদের কেনাকাটা করছেন অনেকে। অনলাইন পোর্টালে গিয়ে কোনো পণ্য অর্ডার করলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছে যায়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অনলাইন শপের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি। আর অনলাইনে শপিং করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এসব মাধ্যমে প্রতিবছর লেনদেন হয় ২০০ কোটি টাকারও বেশি।
আপনি যদি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য ঘরে বসে কিনতে চান তাহলে এই সুবিধা পাবেন অনলাইনে কেনাকাটার সাইট বাংলাদেশ ব্র্যান্ডসে (www.bangladeshbrands.com)। বাংলাদেশ ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদেকা হাসান বলেন, “এ সাইটটিতে রঙ, প্রবর্তনা, মেনজ ক্লাব, বিবিআনা, স্মার্টেক্স, অহং, ল্যাভেন্ডার একসট্যাসিসহ ৬৪টি ব্র্যান্ডের পোশাক কেনা যাবে। বর্তমানে আমাদের এ সাইটে অন্যান্য পণ্য বাদে শুধু পোশাক রয়েছে ৬০ হাজার । ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন পণ্য যুক্ত করেছে।”
বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ছাড়াও ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে এ সাইট থেকে পণ্য কেনা যাবে। গত মাসে এই সাইট থেকে ১৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হলেও এই মাসে আরও বেশি বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য বিভিন্ন সাইট থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলেও অনেকে পণ্য বিক্রি করছেন। শৌখিন ফ্যাশন Showkhin Fashion ও ড্রিম টাচ Dream Touch অনলাইনে পণ্য বিক্রির তেমনি দুটি পেজ।
শৌখিন ফ্যাশন গত বছর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এই পেইজে লাইক এখন ২৫ হাজার। শৌখিন ফ্যাশনের প্রধান নির্বহী পরিচালক ইমরান খান বলেন, “আমাদের এখানে ইন্ডিয়া থেকে আনা আনস্টিচ বা সেলাই বিহীন ফ্লোরটাচ আনারকলি, পার্টি ড্রেস, ব্রাসোর থ্রি-পিস, সুতি থ্রি-পিস সহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাওয়া যায়।
আর ঈদকে সামনে রেখে সদ্যই শুরু করা ড্রিম টাচের পেইজে লাইক ২০০। এর স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান সুজন বললেন, দিন দিন অনলাইনে বেচাবিক্রি বাড়ছে, তাছাড়া শোরুম দিয়ে ব্যবসা শুরু করার তুলনায় এখানে ব্যবসা করা অনেকটা সহজও। আমরা প্রধানত মেয়েদের জামা এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি করছি। মাত্রই শুরু করলেও আমাদের বিক্রি আশা ব্যাঞ্জক।”
অনলাইনের ক্রেতারা জামা-কাপড়, জুতা, ঘড়ি কিংবা গৃহস্থালি জিনিস যাই কিনুন না কেন, ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে বা গ্রাহক পণ্য হাতে পাওয়ার পর দাম মেটানোর সুযোগও রয়েছে। অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও পরিশোধ করছেন মূল্য।
এছাড়া মূল্য পরিশোধে ব্যাংকের সহায়তাও পাওয়া যাচ্ছে। তাই ক্রেডিট কার্ডে কেনার বাধ্যবাধকতা নেই। অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সুবিধা থাকলেও কিছু অসবিধাও আছে আর তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্রেতারা অভিযোগ করে থাকে, পছন্দ করে অর্ডার করা পণ্যের সাথে হাতে পাওয়ার পণ্যের মিল নাই।
এ বিভাগের আরো..
জুম কলে মানব মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা থাকে না: গবেষণা
বাংলাদেশে সুইস বিনিয়োগ চেয়েছেন: প্রধানমন্ত্রী
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন বন্ধ করবে কানাডা সরকার