May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

ইসলামে যাকাতের বিধান

নজিস্ব প্রতিবেদক : আবু আইউব (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী (সা.)কে বলল, আপনি আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন, তার কী হয়েছে, তার কী হয়েছে! নবী (সা.) আরও বললেন, তার বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। তুমি আল্লাহ্‌র ইবাদত করো, যাকাত দাও এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখো। (বুখারী, কিতাবুয যাকাত, বাব-১, নং-১৩৯৬)।

তাহলে আমরা এই হাদীসটির আলোকে দেখতে পারছি, তিনটি পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে জান্নাতের জন্য। একটি পথ হচ্ছে আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে হবে, দ্বিতীয়টি যাকাত দিতে হবে আর তৃতীয়টি আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। এখানে প্রসঙ্গক্রমে যাকাতের বিষয়ে আমরা যৎকিঞ্চিত আলোচনা করছি।

যাকাত : ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমাতিক্রমকারী সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) অংশ বছর শেষে বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ এবং যাকাতই শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। উল্লেখ্য, নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত কোনো ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হয় এবং তখন তার ওপর ‘যাকাত’ নামক ফরয বর্তায়; অর্থাৎ যাকাত আদায় করা ফরয। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে “যাকাত” শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার।

যাকাতের শর্তসমূহ : স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার ওপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন :

১. সম্পদের ওপর পূর্ণ মালিকানা

সম্পদের ওপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ, মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের ওপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার থাকা। যে সকল সম্পদের মালিকানা সুস্পষ্ট নয়, সে সকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই, যেমন : সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ। অনুরূপভাবে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়ক্‌ফকৃত সম্পদের ওপরেও যাকাত ধার্য হবে না। তবে ওয়াক্‌ফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয়, তবে তার ওপর যাকাত দিতে হবে।

২. সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া

যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে, অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন- গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মালামাল বর্ধনশীল।[১] অর্থাৎ যে সকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়, সে সবের ওপর যাকাত ধার্য হবে না, যেমন- ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, চলাচলের বাহন ইত্যাদি।

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ

যাকাত ফরয হওয়ার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা। সাধারণ ৫২.৫ তোলা রুপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়টি মিলে ৫২ তোলা রুপার সমমূল্যের সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হয়।

৪. মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা

সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার ওপরই যাকাত ফরয হবে। এপ্রসঙ্গে আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে :

লোকজন আপনার (মুহাম্মদের) নিকট জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।

ইবনে আব্বাস [রা.] বলেন, অতিরিক্ত বলতে পরিবারের ব্যয় বহনের পর যা অতিরিক্ত বা অবশিষ্ট থাকে তাকে বুঝায়।

আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী’র মতে, স্ত্রী, পুত্র, পরিজন, ও পিতামাতা এবং নিকটাত্মীয়দের ভরণ-পোষণও মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।

৫. ঋণমুক্ততা

নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ততা, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যা, নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার ওপর যাকাত ফরয হবে না। ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়। তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মতটি হল- যে ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় সে ঋণের ক্ষেত্রে যে বছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সে বছর সে পরিমাণ ঋণ বাদ দিয়ে বাকিটুকুর ওপর যাকাত দিতে হয়। কিন্তু ঋণ বাবদ যাকাত অব্যাহতি নেওয়ার পর অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সে সম্পদের ওপর যাকাত দিতে হবে।

৬. সম্পদ এক বছর আয়ত্তাধীন থাকা

নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ ১ বছর নিজ আয়ত্তাধীন থাকাই যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত। তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত (উশর) প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও কোম্পানির ক্ষেত্রে বছর শেষে উদ্বৃত্তপত্রে (Balance Sheet) বর্ণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

যাকাত বণ্টনের খাত : যাকাত বণ্টনের কিছু নির্দিষ্ট খাত আছে। এই খাতগুলো সরাসরি কোরআন দ্বারা নির্দিষ্ট, এবং যেহেতু তা আল্লাহ’র নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত, ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না।

১. মুসলমান ফকির (যার কিছুই নেই)
২. মুসলমান মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
৩. যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)
৪. (অমুসলিমদের) মন জয় করার জন্য
৫. ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)
৬. ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি
৭. (স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি
৮. মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)

– See more at: http://www.thereport24.com/article/112428/index.html#sthash.mqAkMkiN.dpuf

Print Friendly, PDF & Email