April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত : ৫ মরদেহ উদ্ধার

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও নিচু এলাকায় পানি আরো বাড়ছে বলে জানা গেছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত বন্যার পানিতে ভেসে আসা নিখোঁজ পাঁচ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে, টেকনাফে পাহাড় ধ্বসে মারা গেছে মা-মেয়ে। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে, পাহাড় ও দেয়াল ধ্বস এবং গাছ চাপায় গত তিন দিনে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

জেলার চকরিয়া, রামু, পেকুয়া ও সদর উপজেলার প্রায় ৩৫টি ইউনিয়নের সাত লাখ মানুষ পানিবন্দী জীবন কাটাচ্ছে। সড়কের উপর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি চলাচল করায় গত তিন দিন ধরে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, চকরিয়া-মগনামা সড়কের যোগযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একটি ব্রিজ ধ্বসে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়েও যানবাহন। মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর পানি এখনো বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, শনিবার সকালে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পুরানপাড়া গ্রামে পাহাড় ধ্বসে একটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় বাড়ি মালিক মনজুর আলমের স্ত্রী মাসুদা খাতুন (৪০) তার মেয়ে শাহানা আকতার শানু (১৪)।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দিন জানান, পাহাড় ধ্বসের খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনসহ ঘটনাস্থল থেকে পাহাড়ের মাটি সরিয়ে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম জানান, উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্চপিয়াসহ আটটি ইউনিয়নে বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো পানিবন্দী রয়েছে ৫০টি গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার অধিবাসী। এছাড়া পানিতে ডুবে রয়েছে অনেক বাড়ি-ঘর।

তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার ভেসে গিয়ে নিখোঁজ কচ্ছপিয়ার এরশাদ উল্লাহর মেয়ে হুমাইরা বেগম ও কামরুন নাহারের (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পাহাড় বেষ্টিত এ এলাকায় বিগত কয়েক বছর ধরে ভয়াবহ বন্যার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, উপজেলার কাকারা, কৈয়ারবিল, ফাঁসিয়াখালী, পৌর এলাকা থেকে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও উপজেলার নিচু এলাকার চারটি ইউনিয়নের বন্যার পানি ঢুকে আরো অর্ধ লাখ মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।

তিনি আরো জানান, বন্যার পানিতে নিখোঁজ হওয়া চকরিয়া লক্ষারচরের আনোয়ার আলীর মরদেহ শনিবার সকালে এবং কাকারা গ্রামের নিখোঁজ নবম শ্রেণির ছাত্র কাউসাইন করিমের মরদেহ দুপুরে উদ্ধার করা হয়েছে।

উপকূলীয় পেকুয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন গত চারদিন ধরে পানিবন্দী রয়েছে জানিয়ে উপজেলার চেয়ারম্যান শেফায়েত আজিজ রাজু বলেন, উপজেলা সদর, শিলখালী, মগনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার বাড়ি-ঘর ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। পেকুয়ায় বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে মারা গেছে এক শিশু।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, জেলায় বন্যদুর্গত লোকদের জন্য ১৪৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, ৫০ বস্তা চিড়া বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি নিহতের পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা করে নগদ সাহায্য দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, জেলায় বন্যাদুর্গত এলাকায় ১৪১টি আশ্রয় কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ২০০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় ও সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে।

এদিকে, সদর উপজেলার ঝিলংজার মুহুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক দুর্গত নারী-পুরুষকে সেহেরি খাইয়েছেন কক্সবাজারের একদল সাংবাদিক। শনিবার ভোররাত ২টার দিকে ভারী বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়।

আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক জানান, কক্সবাজারে গত ২৪ ঘন্টায় ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। এছাড়া এ রকম পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email