April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

কাল যোগ দিচ্ছেন নতুন সেনাপ্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক কাল (বৃহস্পতিবার) যোগ দিচ্ছেন। এদিন দুপুরে বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সেনা সদর দপ্তরে নতুন সেনাপ্রধানের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিবেন।

বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে বিদায়ী সেনা প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন বলেন, বৈঠকে সেনাবাহিনীর প্রধান তার দায়িত্ব পালনকালে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা এবং সহযোগিতা প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেনাপ্রধান বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।

জয়নাল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতি বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য বিদায়ী সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ জানান। সেইসঙ্গে তার দায়িত্বকালে সেনাবাহিনীর সেসব উন্নয়ন হয়ছে তা ভবিষতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতিকে বিদায়ী সেনাপ্রধান ‘বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ইতিহাস’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযান’ বই দুটি উপহার দেন।

এছাড়া বিদায়ী সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবন কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বিদায়ী সেনাপ্রধান তার দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বির্দেশনা ও সমর্থন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য জেনারেল ভূঁইয়াকে ধন্যবাদ জানান। সেনাপ্রধান ‘বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ইতিহাস’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযান’ শীর্ষক দু’টি বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।

সৌজন্য সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিচ্ছেন বিদায়ী সেনাপ্রধান

আইএসপিআর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া। এছাড়া সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে সেনাকুঞ্জে বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধানকে সেনাকুঞ্জে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপরই সেনা সদরে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে বিদায়ী সেনাপ্রধানের দায়িত্বভার হস্তান্তর ও নতুন সেনাপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। সদ্য নিযুক্ত সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক জেনারেলের মর্যাদা নিয়ে সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব নেবেন।

গত ১০ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিএ-১৭৩৮ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হককে জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক ‘চিফ অব স্টাফ অব দ্য ডিফেন্স সার্ভিসেস (টেনার অব অ্যাপয়েন্টমেন্ট) অর্ডার, ১৯৮১’ অনুসারে ২০১৫ সালের ২৫ জুন থেকে তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।’

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শফিউল হক ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে কমিশন লাভ করেন। তিনি তার ব্যাচে শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট নির্বাচিত হন এবং ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। শফিউল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বর্তমানে পিএইচডি করছেন। দেশ ও বিদেশে সেনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড এবং মিরপুর স্টাফ কলেজের একজন গ্রাজুয়েট। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসের ফোর্ট লেভেনওয়ার্থের কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কলেজ থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়া প্রথম দিকের সেনা কর্মকর্তাদের একজন শফিউল হক। ১৯৮৮-৮৯ সালে তিনি পর্যবেক্ষক হিসেবে ইরাকে যান। পরে ২০০৬-০৭ সালে ইউএনএমইইর ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। লেফটন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্ত্রী সোমা হক, এক কন্যা ও এক ছেলে নিয়ে তার পরিবার। তার ভাই আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে সম্প্রতি নির্বাচিত হয়েছেন।

এক নজরে বিদায়ী সেনাপ্রধান

বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ২০১২ সালের ২৫ জুন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৩তম সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবীনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

ইকবাল করিম ভূঁইয়া

তিনি ১৯৫৭ সালের ২ জুন কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে লেখাপড়া করেন। তার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে।

১৯৭৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) তৃতীয় কোর্সের ক্যাডেট হিসাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন পদাতিক বাহিনীর কর্মকর্তা ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালের মে মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন। জাতিসংঘ মিশনে কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়া চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তিনি সেনা প্রধান হওয়ার পূর্বে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email