May 16, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে নগরবাসী

বিশেষ প্রতিবেদক : গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানীবাসী। ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কারে পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা। একবার কোথাও পানি জমলে, আর যেন তা সরতে চাইছে না। এছাড়া পানিতে ডুবে থাকায় রাস্তাগুলোও ভেঙে একাকার হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এবার দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টির ভোগান্তির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে পরিবহন সংকটও। সুযোগ পেয়ে রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা হাঁকছেন দুইগুণ-তিনগুণ ভাড়া। শনিবার সপ্তাহের প্রথম দিনের সকালে কিছু সময়ের জন্য রোদ উঠলেও সাড়ে দশটার পর আকাশ মেঘলা হয়ে যায়। ১১টার পর রাজধানীতে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির ধারা নামতে থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।

এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশান, বনানী, কুড়িল, কুড়াতলী, শাহজাদপুর, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, খিলক্ষেত, উত্তরা, জোয়াসাহারা, ভাসানটেক, পল্লবীর কালশী, রূপনগর, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, কাফরুল, মোহাম্মদপুর, মগবাজার- এসব এলাকার রাস্তায় পানি জমে যায়।

মিরপুর রূপনগরের ১৩ নম্বর সড়কের বাসিন্দা ইয়াসিন বেগ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে মিরপুরের ড্রেনেজ লাইনগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেনগুলো ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে উপচে পড়ে ময়লা পানি। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ডাস্টবিনের আবর্জনা মিশে রাস্তায় দুর্গন্ধ ছড়ায়চ্ছে।

একই অবস্থা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, চাদনিঘাট, যাত্রাবাড়ী, মিরহাজীর বাগ, পূর্বদোলাইরপাড়, জুরাইন, পোস্তগোলা, ফরিদাবাদ, ধলপুর, মানিকনগর, গোপীবাগ, মুগদা, বাসাবো, মাদারটেক, কলাবাগান, ধানমণ্ডি প্রভৃতি এলাকার রাস্তাগুলোরও।

মিরহাজীর বাগ আবুহাজী কাঁচাবাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, দশ-পনের মিনিট বৃষ্টি হলেই বাজারে হাঁটু পানি জমে। ফলে আর ক্রেতারা বাজারে আসেন না। এই পানির কারণে তিন দিন ধরে তাদের ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

৪৮ নম্বর ওয়ার্ড (গেন্ডারিয়া) কাউন্সিলর আবদুল কাদির বলেন, ‘তিন দিন ধরে বৃষ্টিতে মানুষ শান্তিতে নেই। সারাক্ষণই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাচ্ছি। লোক পাঠিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। সিটি করপোরেশনও এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে।’

এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস হরতাল-অবরোধের কারণে শিক্ষাঙ্গনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইদানিং শনিবারও খোলা থাকছে বেশ কিছু স্কুল। শনিবারের বৃষ্টিতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরতে দেখা যায়।

বৃষ্টির কারণে শনিবার রাজপথে গণপরিবহনও কমে গেছে। কর্মজীবী মানুষদের দীর্ঘ সময় রাস্তা ও ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরমুখী প্রতিটি বাস, টেম্পোতে দেখা গেছে প্রচণ্ড ভিড়। কোনও কোনও বাসে বাদুরঝোলা হয়েও লোকজন চলাফেরা করছে। গণপরিবহন সংকটের সুযোগ পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চালকরা ভাড়া হাঁকছে দুই-তিন গুণেরও বেশি। অটোরিকশা চালকরা এখন আর মিটারে যাত্রীবহন করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের মতে, ঢাকায় যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে তা দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ আট মিলিমিটার বৃষ্টি হলে নিষ্কাশন করা সম্ভব। এর বেশি হলেই প্রধান সড়ক থেকে পাড়া-মহল্লা সবখানে পানি আটকে যায়।

জানা গেছে, রাজপথ থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন তিন সংস্থার মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ওয়াসা। রাস্তার পানি নিষ্কাশনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের রয়েছে ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি সারফেস ড্রেন এবং প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন। বৃষ্টির পানি এসব ড্রেন লাইন হয়ে ওয়াসার ড্রেনেজ লাইন ও খালে গিয়ে পড়ে।

অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসার রয়েছে প্রায় ১০ কিলোমিটার বক্সকালভার্ট, প্রায় তিনশ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন ও ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি প্রাকৃতিক খাল। নগরীর ভেতরের পানি দ্রুত নিষ্কাশন করতে কল্যাণপুর ও ধোলাইখালে দুটি স্থায়ী পাম্পিং স্টেশন এবং রামপুরা ও গোপীবাগের জনপথে রয়েছে দুটি অস্থায়ী পাম্পিং স্টেশন।

ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘শনিবার তেমন জলাবদ্ধতা হয়নি। কারণ এদিন বৃষ্টির পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম। বেশি বৃষ্টি হয়েছিল বৃহস্পতিবার। ওইদিন দুই ঘণ্টা ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে কয়েক ঘণ্টার জন্য কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কুদরতউল্লাহ শনিবার বলেন, ‘রাস্তাগুলোকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি। তবে বৃষ্টির হওয়ার এক-দুই ঘণ্টা পর এই জলাবদ্ধতা থাকছে না। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কুড়িল বিশ্বরোড ও প্রগতি সরণীতে জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে। কারণ রাজউকের ফ্লাইওভার তৈরির সময় এসব এলাকার পানি নিষ্কাশনের আউটলেট (নিষ্কাশনপথ) বন্ধ হয়ে গেছে।’

অভিযোগ পাওয়া গেছে, শুষ্ক মৌসুমে সারফেস ড্রেন, ভূগর্ভস্থ পাইপ কিংবা বক্সকালভার্ট কোনওটাই ভালভাবে পরিষ্কার করা হয় না। তবে বছরে একবার রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে যাচ্ছেতাইভাবে পরিষ্কার কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেনগুলো ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন সড়কের ওপর পানি জমে মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলে।

Print Friendly, PDF & Email