April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

তিস্তা নিয়ে মোদির ঘরোয়া কমিটি

কুটনৈতিক প্রতিবেদক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার রাতে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার পর বিশেষ বিমানেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, নরেন্দ্র মোদির প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র। বৈঠকে মোদি নির্দেশ দিয়েছেন, বাংলাদেশ সফর শেষ হয়ে গেছে মানেই কাজ শেষ হয়ে গেছে এমন নয়। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে যে দশটি চুক্তি হয়েছে, তার কাজ আজ থেকেই শুরু করতে হবে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ছিটমহল বিনিময়ের কাজ জুলাইয়ের মধ্যে রূপায়িত করতে হবে। ৩১ জুলাই ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডে’ হিসেবে ধরে কাজ শুরু করা হচ্ছে। ওই চুক্তির ফলে প্রায় আটশো পরিবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। নভেম্বরের মধ্যে সেই পরিবারগুলোর পুর্নবাসন সেরে ফেলার পাশাপাশি সীমান্তে বেড়া লাগানোর কাজ মিটিয়ে ফেলতে চাইছে ভারত।

এদিকে স্থলসীমান্তের পাশাপাশি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে জট কাটানোর লক্ষ্যে তৎপর হয়েছে দিল্লি। এর জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ঘরোয়া কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যেখানে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অজিত ডোভাল ও নৃপেন্দ্র মিশ্র এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা থাকবেন। ওই কমিটিতে সিকিম সরকারের প্রতিনিধিদের রাখার বিষয়েও ভাবা হয়েছে।

এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গওহর রিজভির সঙ্গে ঘরোয়া স্তরে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ভারত। উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলা।

এদিকে ছিটমহল বিনিময়ের জন্য রাজ্যের ওপর পুনর্বাসনের যে আর্থিক বোঝা চাপবে, তা বহন করতে ইতিমধ্যেই তিন হাজার আট কোটি রুপি বরাদ্দ অনুমোদন করেছেন নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকারকে এ-ও জানিয়ে দেয়া হয়েছে- ওই তহবিলের একটি অংশ সীমান্তে বেড়া দেয়ার জন্য খরচ করতে হবে রাজ্যকে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আমলা জানান, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সীমান্তের শতচ্ছিদ্র অবস্থা। তার একটা বড় কারণ ছিল ছিটমহল। কিন্তু স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পাদনে দু’দেশের সীমানা সুনির্দিষ্ট হয়েছে। এখন সীমান্তে বেড়া দিয়ে অনুপ্রবেশে অনেকটাই রাশ টানা সম্ভব।

কেন্দ্র সরকারের এ প্রস্তাবে বিরোধ থাকার কথা নয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের। কিন্তু তা সত্ত্বেও উদ্বেগ জিইয়ে থাকছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের এক আমলা বলেন, বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধে ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা ইতিবাচক নয়। অতীতে বাম জমানায় বল্গাহীনভাবে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তার প্রভাবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জনবসতির চরিত্রও বদলে গেছে। ভারতের বর্তমান সরকারেরও অনুপ্রবেশ নিয়ে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে। সেই কারণেই রাজ্যকে বারবার বেড়া দেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শর্ত সাপেক্ষে সায় দিয়েছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, ছিটমহল আদান-প্রদানের ফলে ভারত থেকে যতো পরিবার বাংলাদেশে আসবেন, তার থেকে বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশ থেকে মানুষ ভারতে যাবেন। হিসেব মতো ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলের সব বাসিন্দা ও ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে অপশন দিয়ে আসা মানুষ মিলিয়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার লোক পাকাপাকিভাবে পশ্চিমবঙ্গে যেতে পারেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কথায়, কেন্দ্রের হিসেবে খুব বেশি হলে ৩৫ হাজারের মতো মানুষ পাকাপাকিভাবে ভারতে যাবেন। তাদের পুনর্বাসনের দায় নিচ্ছে কেন্দ্র।

Print Friendly, PDF & Email