April 29, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

‘ভারতে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি আত্মহত্যার সামিল’

বিশেষ প্রতিবেদন : বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লি. (বিএসসিসিএল) ভারতের কাছে অবিশ্বাস্য কম মূল্যে তাদের তথাকথিত অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে যাচ্ছে। ভারতে এই কথিত অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির বিষয়টি অনেকটা আত্মহত্যার সামিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) কাছে বিএসসিসিএল যে মূল্যে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে তার তুলনায় তিন থেকে পাঁচ ভাগ কমে ভারতের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।

বিএসসিসিএল এবং ভারত সঞ্চার নিগাম লি. (বিএসএনএল) এর মধ্যে গত শনিবার এ বিষয়ে এক চুক্তিও সাক্ষর হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী সেভেন সিস্টারস নামে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ ১০ ডলারে বিক্রি করতে যাচ্ছে বিএসসিসিএল।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যখন আমাদের আভ্যন্তরিণ চাহিদার ৯০% ব্যান্ডউইথ ভারত থেকে আমদানি করে মেটানো হয়, সেখানে কোন যুক্তিতে সরকার এ ধরণের চুক্তি করেছে তা বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে শনিবার বিএসসিসিএল ও বিএসএনএল-এর মধ্যে এ চুক্তি সাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এই চুক্তিতে সাক্ষর করেন বিএসসিসিএল ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন। এ নিয়ে মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গত এক সপ্তাহ ধরে বারংবার চেষ্টা করা হলেও ব্যস্ততার কথা বলে তিনি প্রতিবারই এড়িয়ে যান।

গতবছর দুই দেশের কর্তৃপক্ষের মধ্যে চুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সাক্ষরিত হয়। পরে, এবছর গত ২০ এপ্রিল মন্ত্রিসভায় বিএসসিসিএল এর প্রস্তাবনা অনুমোদিত হয়।

এদিকে, বিএসসিসিএল এর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী স্থানীয় আইএসপি ব্যবসায়ীরা বিএসসিসিএলের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৫০ ডলারে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্রয় করে থাকে।

গত ২০ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, “ভারতে বছরে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৯৪.২ মিলিয়ন টাকা আয় করবে। যেখানে বিএসসিসিলের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে স্থানীয় প্রোভাইডারদের একই পরিমাণ ব্যান্ডউইথের জন্য ২৩০ মিলিয়ন টাকা পরিশোধ করতে হয় বিএসসিসিএলকে।”

ব্যান্ডউইথ রপ্তানি বিষয়ে এই চুক্তি প্রসঙ্গে সরকার দুই দেশই লাভবান হবে বলে জানালেও আইএসপি কর্তৃপক্ষ ভিন্নমত প্রকাশ করে জানিয়েছে, এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) প্রেসিডেন্ট আমিনুল হাকিম বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সরকারের হাতে থাকা বর্তমানে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ২০০৫ সালেও একই ছিল। কিন্তু, গত দুই বছর ধরে কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, বিএসসিসিএলের হাতে প্রচুর পরিমাণে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রয়ে যাচ্ছে। তাদের যুক্তি, যা সহজেই ভারতে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যদি তাই হয় তবে এই তথাকথিত অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিতে ১০ বছর দেরি হলো কেনো? আগে কেনো অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির কথা শোনা যায়নি?”

যদি সত্যিই আমাদের বাড়তি ব্যান্ডউইথ থাকতো তবে কেনো বিটিআরসি ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্যাবল অপারেটরদের (আইটিসি) ব্যান্ডউইথ আমদানির লাইসেন্স দিয়েছিল সে প্রশ্নও করেন আমিনুল হাকিম।

দেশের মোট ব্যান্ডউইথ চাহিদার শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই ভারত থেকে আমদানি করে মেটানো হয় জানিয়ে আমিনুল বলেন, “যখন আমরা নিজেরাই শতকরা ৯০ ভাগ আমদানি করি তখন ভারতের কাছে ব্যান্ডউইথ রপ্তানির সিদ্ধান্ত কি আত্মঘাতী নয়?”

তিনি আরও প্রশ্ন করেন, “এই কথিত অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ ভারতের কাছে যে দামে বিক্রি করা হচ্ছে, সেই একই মূল্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে কেনো বিক্রি করা হচ্ছে না?

Print Friendly, PDF & Email