নিজস্ব প্রতিবদেক : বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি ঠেকাতে এবং অকৃষি খাতে ঋণ বিতরণ না করার নির্দেশ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকটির ১৬টি বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার মাধ্যমে অকৃষি বাণিজ্যিক খাতে ১ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। যার পুরোটাই এখন পর্যন্ত খেলাপি।
১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য বিশেষায়িত এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদ মওকুফ, ভর্তুকি সুদে ঋণ বিতরণ, আমানতের সুদ হার বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ব্যাংকটি লোকসানে রয়েছে।
আর লোকসান ঠেকাতে ২০১০ সাল থেকে বেশি মুনাফার আশায় অকৃষি বাণিজ্যিক খাতে ঋণ বিতরণ শুরু করে ব্যাংকটি। তাতেও কপাল ফিরল না এ ব্যাংকের। বিতরণ হওয়া ঋণের পুরোটাই খেলাপি হচ্ছে। এ জন্য অর্থমন্ত্রণালয় ব্যাংকটির প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে। যা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসূফ।
এদিকে অকৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার কারণে তহবিল শুন্য হয়ে পড়ায় কৃষি খাতে ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকটি। অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বাড়ায় এর বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে হচ্ছে। আর অর্থ না থাকায় তাতেও ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকটির প্রভিশন রাখার কথা ২ হাজার ৯২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রভিশন আছে মাত্র ৮৪৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয়ের চিঠিতে কৃষি বহির্ভূত বাণিজ্যিক খাতে ঋণ বিতরণ না করতে এবং বিতরণ হওয়া ঋণের বেশিরভাগ খেলাপি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া হতদরিদ্র কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণের নির্দেশ এবং শুধু কৃষি সংশ্লিষ্ট শিল্প বা সেবা পণ্যের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ কার্যক্রম সীমিত রাখতে চিঠিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মার্চ শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণ ১৬ হাজার ৩০৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৩৭২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খেলাপি, যা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে মন্দ খেলাপি ঋণ (আদায়ের সম্ভাবনা কম) ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
বর্তমানে ব্যাংকটির পুঞ্জিভূত লোকসান ৬১৩১ কোটি টাকা। যা ২০০১ সাল থেকে দেখানো হচ্ছে।
ব্যাংকটির ঋণের বোঝা কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ২০ শতাংশের মধ্যে আনার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসূফ বলেন, “অবশ্যই চেষ্টা রয়েছে ২০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার। সেজন্য ১ হাজার ২৯টি শাখার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দায়বদ্ধতা বাড়ানো হয়েছে। অঞ্চল প্রধানদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরও করছি। এছাড়া ব্যাংকের সার্বিক উন্নয়নে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার প্রধান কাজ কর্মকর্তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। পাশাপাশি ব্যাংকের লোকসান কমানো।”
তিনি বলেন, “আমরা চাচ্ছি, আগামী তিন বছরের মধ্যে ব্রেক ইভেনে আসতে। তবে এই সময়ে বেতন বাড়ানো, ঋণের সুদ হার কমানো-এসব কারণে লোকসান কতটা কমানো যাবে, সেটা এখনই বলতে পারছি না।”
এ বিভাগের আরো..
তেঁতুলিয়ায় আই এফ আই সি ব্যাংকের উদ্যোগে আর্থিক স্বাক্ষরতা দিবস
বগুড়া যমুনা চরে বাদামের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা
জিরা চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে কৃষক জহুরুল