ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : জেলার হরিণাকুণ্ডুর নারায়ণকান্দি এখন জেলাবাসীর কাছে সৌদি খেজুরের গ্রাম বলে পরিচিত। বাণিজ্যিকভাবে খেজুর উৎপাদন না হলেও মাঠের পর মাঠ বালুময় জমিতে সৌদি খেজুরের গাছ শোভা পাচ্ছে। গত দুই বছর ধরে গাছে ফুল আসলেও কৃষকদের অনভিজ্ঞতা আর পরিচর্চার অভাবে চুরমি ঝরে যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে সরকারের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নারায়ণকান্দি গ্রামে সৌদি খেজুরের চারা রোপণ করা হয়। সদর উপজেলার মীর্জাপুর ও কুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠেও এই প্রকল্পের আওতায় সৌদি খেজুরের চারা রোপল করা হয়। সরকারিভাবে দুই বছর পরিচর্চা শেষে কৃষকদের কাছে খেজুর বাগান হস্তান্তর করে বনবিভাগ।
প্রকল্পকালীন সময়ে দায়িত্বরত ঝিনাইদহ জেলা ফরেস্ট অফিসার গিয়াস উদ্দীন মুকুল জানান, ঝিনাইদহ বনবিভাগের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় জেলার পরিত্যক্ত ও বালু জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সৌদি খেজুরের চারা রোপণ করে ভাল ফল পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা ও হরিণাকুণ্ড এলাকার পরিত্যক্ত জমিতে তিন লাখেরও বেশি সৌদি ও দেশি খেজুরের চারা রোপণ করা হয়। এর মধ্যে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়ণকান্দী গ্রামের বেলের মাঠে সবচেয়ে বড় সৌদি খেজুরের বাগান করা হয়েছে।
গিয়াস উদ্দীন মুকুল আরও জানান, নারায়ণকান্দি গ্রামের দবির উদ্দীন, আব্দুল লতিফ, আব্দুল বারী, আবু বিন আদম, কাজী খায়রুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, মজিবর বিশ্বাস, মুক্তার আলী বিশ্বাস, আব্দুর রশিদ, কাজী রবিউল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন ও আমির আলীসহ এলাকার ৪৮ জন কৃষকের ৫০ বিঘা জমিতে সৌদি খেজুরের বাগান করা হয়।
সৌদি খেজুরের সবচেয়ে বড় বাগানের মালিক নারায়ণকান্দি গ্রামের দবির উদ্দীন জানান, গাছ রোপণের তের বছর পর ২০১৪ সালে গাছে চুরমি (স্থানীয় ভাষায় চোমর বলে) আসে। ওই বছর চুরমিগুলো ঝরে যায়। তিনি আরও জানান, এ বছর ৭০/৮০টি গ্রামে চুরমি আসলেও মাত্র দুটি গাছে খেজুর ধরেছে। তিনি শুষ্ক মৌসুমে নিয়মিত সেচ দিয়ে খেজুর গাছগুলো তরতাজা করে তুলেছেন বলেও জানান। তবে দবিরের মতো নারায়ণকান্দি গ্রামের আর কোন কৃষক সৌদি খেজুর বাগানের পরির্চাচা করেন না বলে জানা গেছে।
একই গ্রামের আব্দুস সালাম অভিযোগ করেন, গ্রামের কিছু অসাধু মানুষ সৌদি খেজুর গাছের পাতা কেটে নিয়ে যায়। এ জন্য কিছু বাগান দুর্বল হয়ে গেছে।
একটি গাছে খেজুর আসায় গোটা নারায়ণকান্দি গ্রাম এখন উচ্ছ্বসিত। সুদূর সৌদি আরবের খেজুর এখন তাদের নাগালে বলেও মনে করেন নারায়ণকান্দি গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান।
এদিকে চৌদ্দ বছরের বেশি সময় পার হলেও পরিচর্চা আর যত্নের অভাবে খেজুর ধরছে না বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। তাদের ভাষ্য, বাগান মালিকরা সচেতন আর ব্যবসায়িক স্বার্থ বুঝলে এক সময় খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ হবে নারায়ণকান্দি গ্রাম থেকে। সৌদি আরবে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ না করা হলেও বাংলাদেশে রোপিত গাছ থেকে খেজুরের পাশাপাশি রস ও গুড় উৎপাদন করা যাবে বলে বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি একাধিকবার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নারায়ণকান্দি গ্রামের সৌদি খেজুরের বাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “যত্নের অভাবে খেজুর গাছগুলোতে বিলম্বে ফল আসছে। যত্ন ও পরিচর্যায় এক সময় নারায়ণকান্দি গ্রামে সোনা ফলবে।”
খেজুর গাছের যত্নে কৃষকদের এখন কি কি করণীয় সে সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ঝিনাইদহের কৃষিবিদ ড. মনিরুজ্জামান জানান, সৌদি খেজুর গাছের পরাগায়ন পোকা মাকড়, মৌমাছি বা বাতাসের মাধ্যমে খুব কম হয়ে থাকে। হাত দিয়ে বা মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে পরাগায়ন করতে হয়, যা হয়তো নারায়লকান্দির বাগান মালিকরা জানেন না। তিনি বলেন, বাগানে একশ স্ত্রী গাছের সঙ্গে মাত্র একটি পুরুষ গাছের পরাগরেণু পাউডার দিয়ে স্ত্রী গাছের পুষ্পমঞ্জুরীতে ২/৩ বার লাগিয়ে পরাগায়ন করা যায়। পুরুষ গাছের পাউডার ফ্রিজে ২/৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যায়।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা বন কর্মকর্তা অনিতা মণ্ডল জানান, তারা বাগান মালিকদের চাষ ও যত্ন করার বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন নিয়মিত পরিচর্যা করলে তারা ভাল ফল পেতে পারেন।
এ বিভাগের আরো..
পানির বোতলের মুখের রং লাল, নীল রং এর অর্থ কী?
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অমর হোক: অমর একুশে, মাতৃভাষা ও আমরা
ছয় দফা: স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সেতুবন্ধ