September 19, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শহিদ সন্তান সাদি মহম্মদ

ডেস্ক: রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শহিদ সন্তান ও রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর জানাজা নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে।

শহীদ সলিম উল্লাহর ছেলে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনে খুবই চেনা মুখ।

প্রখ্যাত এ শিল্পী বুধবার সন্ধ্যার দিকে মারা যান। বাসার একটি কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। পুলিশের ধারণা, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন এই শিল্পী।

বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা সাদি মহম্মদ একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার ছিলেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন সাদি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক।

২০১২ সালে সাদি মহাম্মদকে আজীবন সম্মাননা দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়।

সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজউদ্দিন হোসেন এর পুত্র তৌহীদ রেজা নূর এর ফেসবুক পেজ থেকে:-

অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার পর মোহাম্মদপুরে নিজেদের বাসভবনে বিহারী জনগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হন তাঁর পরিবার। এক পর্যায়ে বাঁচার জন্য পাশের বাড়ির বাথরুমে বাবাসহ লুকিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই বাথরুমে এসে তাঁর চোখের সামনেই ছুরিকাঘাত করা হয় পিতা আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতা জনাব মোহাম্মদ সলিমউল্লাহকে। বাবাকে মারার জন্য আরো অন্যরা এগিয়ে আসতে থাকলে বাবা তাঁকে জোর করে হাত ছাড়িয়ে দেন এবং পালাতে বলেন। পালিয়ে যাবার সময় রাস্তার মধ্যে দেখেন তার চাচাকে বল্লমের আঘাতে হত্যা করা হচ্ছে। দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে অন্য এক বাড়িতে এলে দেখেন তাঁর এক খালাতো ভাইকে জবাই করা হচ্ছে। আর চারদিকে লাশ আর লাশ। বাবার সঙ্গে সেদিন তাঁরও শহীদ হয়ে যাবার কথা! সারা জীবনের আফসোস কেন বাবাকে সেদিন একা ফেলে চলে এলাম! মরে গেলেই তো ভালো হতো! এই সাংঘাতিক ট্রমা থেকে কখনোই মুক্তি পাননি সাদি মহম্মদ, আমাদের সবার প্রিয় সাদি ভাই। অনেক সংগ্রাম শেষে তিনি দেহ রাখলেন আজ – প্রিয়তম পিতার সান্নিধ্য পেতে, স্নেহময়ী মাতার সন্নিকটবর্তী হতে।

একাত্তরে আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি – তাদের সকলের করোটিতে নানা মাত্রার ট্রমার বসবাস। সকল সময় ট্রমাকে মোকাবেলা করে আমাদের জীবন এগিয়ে চলেছে। আমাদের মায়েরা আরো বেশি ট্রমাটিক ও ইডিওসিনক্রেটিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নিরবচ্ছিন্নভাবে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। এখনো যারা আছেন আমাদের আশেপাশে – তাঁদের সেই সংগ্রাম চলমান রয়েছে। জেনোসাইডের ছোবল কত ভয়ংকর হতে পারে তা নানা মাত্রায় এই নারকীয়তার শিকার পরিবারের সদস্য আমরা মরমে মরমে অনুধাবন করি।

সাদি ভাই তাঁর জীবনের সেই বিয়োগান্তক অধ্যায়ের কথা বলেছিলেন ৭১ টিভির সঙ্গে – এই পোস্টে সংযুক্ত করলাম। -সাদি ভাই, অন্তহীন ভালোবাসা আপনার প্রতি!

Print Friendly, PDF & Email