May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা: অভিযোগগঠনের আদেশ ১৫ সেপ্টেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগগঠন বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গতকাল বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই তারিখ ধার্য করেন। ওইদিন আসামিপক্ষে করা জামিনের আদেনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এ মামলায় গত ২ সেপ্টেম্বর এই মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। প্রথমদিন এ মামলায় কারাগারে আটক ২২ আসামির মধ্যে ১৩ জনের পক্ষে অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানি হয়। গতকাল বাকী নয় ৯ আসামির আইনজীবীরা পৃথক পৃথকভাবে শুনানি করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবরাহ হত্যার মামলাটি যথাযথ ভাবে করা হয়নি। আইনজীবীরা মামলা দায়ের ও তদন্তের বিষয়ে বিভিন্ন অসংগতি আদালতের কাছে তুলে ধওে বলেন, এই মামলার ঘটনায় অনেকই ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। তাদেরকে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও মোবাইল কল বা ফেসবুকের সূত্র ধরে আসামি করা হয়েছে। আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, একজন ব্যক্তির সঙ্গে আরেকজনের যোগযোগ হতেই পাওে, তার মানেই কি সেই ব্যক্তি অপরাধী। রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি দিয়ে বলেন, এই বিষয়গুলো ট্রায়াল মেটার অভিযোগগঠনের ক্ষেত্রে এই বিসয়গুলো আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১৫ সে্েপ্টম্বর অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২২ মার্চ এই মামলাটি বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ৬ এপ্রিল অভিযোগগঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ হয়ে গেলে সেই শুনানি আর হয়নি।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ সরকারি দফতরে চিঠি দেন। পরে গত ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল একে স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। গেজেটের পর গত ১৮ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের প্রসিকিউশন প্যানেলও ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে মোশারফ হোসেন কাজলকে চিফ স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এবং এহসানুল হক সমাজী ও মো. আবু আব্দুল্লাহ ভুঞাকে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গত বছর ১৩ নভেম্বর এ মামলায় বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। ১৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় গত ৩ ডিসেম্বর তাদের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর গত ৫ জানুয়ারি পলাতক আসামিদের হাজিরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের একদিন আগে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তিন আসামি পলাতক আছেন। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এজাহার বহির্ভূত ৬ জন। গ্রেপ্তার ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তদন্ত চলাকালে মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। এর মধ্যে ছাত্রলীগ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে।
এদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

এর মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন— ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় এ মামলা করেন।

Print Friendly, PDF & Email