October 9, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

তরুণ সংগঠক জহিরুল ইসলাম বহুমুখী কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখ পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের একটি প্রত্যন্ত এলাকার চরবলাইকাঠী গ্রামের পিতা জাকির হোসেন ও মাতা মাতোয়ারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মোঃ জহিরুল ইসলাম। চার ভাই বোনের মধ্যে বড় ২৭ বছর বসয়ী এই তরুণের নেতৃত্বের প্রশংসা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

দাইসাকু ইকেদা বলেছেন,‘ইতিহাস সব সময়ই তারুণ্যের শক্তির জোরেই রূপ নিয়েছে।’ আর এই ইতিহাসকে রুপ দিতে ছোট্টো বয়সেই দেশকে গড়ার প্রবল ইচ্ছে ছিল পটুয়াখালীর তরুণ জহিরুল ইসলামের। দেশের তরুণদেরকে নিয়ে ছিল তার অভাবনীয় পরিকল্পনা। শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়ন করেও দেখালেন এই তরুণ। বাড়ির পাশের চরবলইকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০০৫ সালে মাদ্রাসায় ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়ন করেন জহির।

২০০৭ সালে গলাচিপা উপজেলার কোটখালী ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে সেখান থেকেই ২০১১ সালে এসএসসি দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় জহির। পরবর্তীতে পটুয়াখালী সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে। বর্তমানে বরিশালের ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

নিজ এলাকা ও দেশের মানুষের জন্য তরুণদের নিয়ে কল্যাণে কাজ করাই ছিলো তার প্রধান ব্রত। তাই তো ২০১১ সালে ব্যাক্তি উদ্যোগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় তার সংগঠন কেন্দ্রিক স্বেচ্ছাসেবী জীবন৷ প্রথমের দিকে জেলা শহরের মত জায়গায় এগিয়ে যাওয়ার গল্পটা এত সহজ ছিলনা জহিরের।  তবুও এগিয়ে গিয়েছেন দুর্বার গতিতে৷ একের পর এক কার্যক্রম পরিচালিত হয় তার উদ্যোগে।

সর্বক্ষেত্রে প্রশংসিত হওয়ার মাধ্যমে ধাপে ধাপে কাজের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছিল জহিরুল ইসলামের।২০১৪ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের এ্যাকটিভ সিটিজেন ইয়ুথ লিডারশীপ প্রশিক্ষণের পর তাদের মাধ্যমে কাজে নামেন তরুণ জহির।  এ সময়টাতে জহির’রা জেলা প্রশাসন ও সরকারি দপ্তরের সাথে কাজ করতেন। এরপর ২০১৫ সালে ‘পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করার মাধ্যমে আরও সক্রিয় ভাবে কাজ শুরু করেন তিনি। পটুয়াখালীর তরুণদের নিয়ে তার ভাবনা যেন আরও একটু বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এর উদ্যোগে সিটিজেন জার্নালিস্ট কার্যক্রম শুরু হলে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভবনা সমূহকে তুলে ধরা, সমস্যা সমুহকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তার সমাধান এবং সম্ভবনা সমুহকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনগণের দাঁড় গোড়ায় সরকারি সেবা সমূহের তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন উদীয়মান তরুণ জহির। এরই মাঝে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জহিরের পলিটেকনিকের ডিপ্লোমা কোর্সের সমাপ্তি ঘটে।

২০১৭ সাল থেকে নারীপক্ষ এর তারুণ্যের কন্ঠস্বর প্লাটফর্মে জেলা সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জেলায় কিশোর-কিশোরী যৌন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সরকারের বিদ্যমান সেবা মান উন্নয়ন, তরান্বিত ও টেকসই করতে কাজ করেছেন। বর্তমানে তারুণ্যের কন্ঠস্বর প্লাটফর্মের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত “অধিকার এখানে, এখনই” প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যক্রমের সফলতায় গত মার্চের ১৮-২৩ তারিখে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এশিয়া প্যাসেফিক রিসোর্স এন্ড রিচার্জ সেন্টার ফর ওমেন’ এর আয়োজনে এশিয়া প্যাসেফিক ফোরাম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইয়ুথ ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইয়ুথ এডভাইসরি প্যানেলের বরিশাল বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশু ও যুবদের জন্য কল্যাণকর কর্মসূচি গ্রহণে ভূমিকা রেখেছেন জহিরুল ইসলাম।

২০২০ সালে দায়িত্বের প্রতি আন্তরিকতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক পটুয়াখালী জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয় জহিরুল।

কিন্তু কার্যক্রম আর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপসহীন ছিলেন জহির। কোনো প্রকার বাঁধা বিপত্তিতে আটকে না গিয়ে ছুটেছেন সাফল্যের পথে।  তাইতো ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায় জহিরের ‘পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরাম’। নিজ প্রতিষ্ঠা সংগঠনের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

কি এমন করেছিলেন জহির? কিভাবে হলেন অদম্য তরুণ? তারুণ্যের দক্ষতা উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, যৌন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা, শিশু অধিকার, জেন্ডার বৈষম্য নিরসন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্ধত্ব রোধে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ছানী অপারেশনসহ দুর্যোগে সাড়াদন ছিলো প্রধান কর্মক্ষেত্র। এছাড়াও গনতন্ত্র ও সুশাসন, মানবাধিকার, তথ্য অধিকার, সরকারি সেবার অধিকতর প্রচার, দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রচারাভিযান, শিশুশ্রম বন্ধ ও শিশু অধিকার রক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গঠনে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে কৌশলগত ভাবে কাজ করেছেন।

দুর্যোগে দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার প্রশিক্ষণ ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নিয়মিত ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৬ সাল বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদের পটুয়াখালী-০১ আসনের যুব ছায়া সংসদ সদস্য হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। ২০২৩ সালে বরিশাল বিভাগীয় অধিবেশনের স্পীকার নির্বাচিত হয়ে, বাংলাদেশের টেকসই ও সুষম উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সরকার গঠনের প্রস্তাব তুলেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এই অদম্য তরুণের কার্যক্রম হৃদয় ছুঁয়েছে সর্বোমহলের। স্থানীয় তরুণদেরকে দক্ষ করে তুলে নিজের স্থানীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে খাপ খায়িয়ে নিতে কাজ করেছেন তিনি।এ নিয়ে দিয়েছেন প্রশিক্ষণ, করেছেন ক্যাম্পেইন, মেলা, আন্দোলন, সভা, সেমিনার, ক্লাইমেট স্ট্রাইক, স্কুল ওরিয়েন্টেশন সহ বেশ কয়েকটি কার্যক্রম।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাধারণ মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব নিয়ে কাজ করেন এই উদ্যমী তরুণ। তিনি পটুয়াখালীর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কলাপড়া, রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলাকে ঘিরে নিয়েছেন নানা ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

দেশকে নিয়ে ভাবনার দশ বছরেরও পিছিয়ে যাননি জহির বরং প্রতিনিয়ত ছুটছেন অদম্যের পিছন,গড়ে তুলছেন সামাজিক মানবসভ্যতা। বর্তমানে জহিরুল ইসলাম দেশের শীর্ষে থাকা এসএ টিভি ও  বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনপ্রিয় দৈনিক সাথী’র বার্তা সম্পাদক হিসেবে আছেন। জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ ও শিশু বিবাহ নিয়ে তথ্য বহুল ও গবেষণা ধর্মী প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ২০২১ সালে অর্জন করেন প্ল্যান ইটারন্যাশনাল বাংলাদেশ মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড। ভালো লেখনির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন আট্রিক্যাল-১৯ এর ফেলোশিপ প্রোগ্রামে।

ভবিষ্যতে নতুন নতুন ইউনিক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে চান এই তরুণ। নিজের দক্ষতা উন্নয়নে অন্যান্য দেশের তরুণ ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে সুযোগ চান। নিজের অভিজ্ঞতাকে ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্ব জুড়ে।