May 15, 2024

দৈনিক প্রথম কথা

বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক

গাইবান্ধার কামারজানির চরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন! রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধা ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও যমুনা নদী থেকে কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব চলছে। ওই সব নদী থেকে অবাধে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু পরিবহন করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অবাধে ও অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসত-বাড়িসহ আবাদি জমি দেবে ভ‚মিধস ও নদী ভাঙ্গনের আশংকা দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে দুই প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও বালু ব্যবসায়ীরা স্থান পরির্বতন করে আবারও বালু উত্তোলন শুরু করছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদী ও সদর উপজেলার গোঘাঘট বিভিন্ন স্থান থেকে কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু চলে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে কয়েকজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হলেও কয়েকদিন পর স্থান পরিবর্তন করে আবার অগের মতই চলতে থাকে অবৈধ এই বালুর ব্যবসা। ফলে ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু ব্যবসার নামে প্রতি সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাগাভাগি হচ্ছে। এভাবে চলছে ওইসব এলাকা জুড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের জমজমাট ব্যবসা।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ ও গোঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৭/৮ টি ট্রাক, কাকড়া ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলছে বালু উত্তোলন। ওই এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্ব একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে বৈধ বালুর ব্যবসা নামে অবৈধ বালুর জমজমাট ব্যবসা। ওই ইউ-পি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসি প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে চলছে। নদী গুলো থেকে কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও এক দিকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিতে পারে আশংকা করা হচ্ছে। এছাড়া নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে নদীর তীরবর্তী বসত-বাড়িসহ ফসলী জমি। এছাড়া খোলা ট্রাকে বালু পরিবহন ও স্ত‚প করে রাখা বালুর কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখে পড়ে এলাকাবাসী। অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান বা নদ-নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে সেই ব্যক্তি বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তির অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা হতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। শুধু তাই নয়, এই আইনের অধীন অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার করা যাবে।
এব্যাপারে কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির জানান, ওইসব ব্যক্তিদের একাধিকবার নিষেধ করা সত্তে¡ও রাতের আধারে তারা বালু উত্তোলন করে আসছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল মতিন জানান, উন্মুক্ত স্থান বা নদ-নদীর তলদেশ থেকে অবৈধ ভাবে বালু বা মাটি উত্তোলনের কোনে সুযোগ নেই। তারপরও যদি কেউ অবৈধভাবে ওইসব কার্যক্রম চালান তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালত এসব বন্ধে কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email